প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের জন্য কমনওয়েলথের পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়োরকর বোচওয়ের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ সমর্থন চান। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে আপনারা সমর্থন দেবেন বলে আশা করি। তিনি কমনওয়েলথ মহাসচিবকে বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রতি গভীর আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। জবাবে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করে বলেন, কমনওয়েলথ বাংলাদেশের নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী রূপান্তরের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমর্থন দেবে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথের ৫৬টি দেশ যেখানে জি-৭ ও জি-২০-এর সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত, যাদের হাতে বিপুল সম্পদ রয়েছে, এ দেশগুলো একে অপরকে শক্তিশালী করতে সেই সম্পদ ব্যবহার করতে পারে।
মহাসচিব আরও জানান, তিনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যার মধ্যে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি যোগ করেন, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। মহাসচিব নিশ্চিত করেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর জন্য কমনওয়েলথ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বৈঠকে দুই নেতা তরুণদের ক্ষমতায়ন, উদ্যোক্তা তৈরি, সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টি এবং বেকারত্ব, কার্বন নির্গমন ও বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্য নিয়ে তিন-শূন্য ভিশন বাস্তবায়ন সম্পর্কেও আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়োরকর বোচওয়ে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক হয়।
বৈঠকের বিষয়ে কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি বোচওয়ে বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দেখা করে আমি আনন্দিত। আমরা বাংলাদেশি জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা আরও গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।
ভূমিকম্প-ঝুঁঁকি মোকাবিলায় এক সপ্তাহের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা : ভূমিকম্প-ঝুঁঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে সরকার। এর আগে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে লিখিত মতামত চাওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে।
গতকাল এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞদের আহ্বান জানান, তারা যেন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সরকারের করণীয় সম্পর্কে লিখিত পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমরা হাত গুটিয়ে রাখতে চাই না, আবার অবৈজ্ঞানিক কোনো পদক্ষেপও নিতে চাই না। আপনাদের পরামর্শগুলো দ্রুত লিখিত আকারে আমাদের দিন, সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং এক বা একাধিক টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়া মাত্রই সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কয়দিন আগে ভয়াবহ ভূমিকম্পে যাদের মৃত্যু হলো, যারা আহত হলেন এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। এমনটি যেন আর না হয়, তার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আপনারা পত্রপত্রিকায় লিখেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন। এই আতঙ্ক থেকে জনগণকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা প্রয়োজন, সরকারকে তা জানান। কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, কোন কোন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে সব জানান। দুর্ঘটনা যেভাবেই আসুক, যেন আমরা সব ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারি।
বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূমিকম্পকে ঘিরে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক গুজব তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১০ দিনের মধ্যে, এক মাসের মধ্যে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে, এ ধরনের অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তারা বলেন, ভূমিকম্প কখন হবে কেউ বলতে পারে না। কোন অঞ্চলে কত বছরে কতগুলো ভূমিকম্প হয়েছে এবং তাদের মাত্রা কী ছিল, তা দেখে একটি সময়সীমা অনুমান করা যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট দিন-তারিখ-সময় বলা যায় না।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ নিয়ে কী কী করণীয় তা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণার ওপর জোর দিয়েছে সরকার। এজন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় তার ওপর মতামত দিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা।
বৈঠকে উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রফেসর মো. জয়নুল আবেদীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী, বুয়েটের অধ্যাপক তাহমীদ মালিক আল-হুসাইনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার, বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম, আবহাওয়াবিদ মো. রুবাইয়্যাত কবীর, ভূতত্ত্ববিদ ড. রেশাদ মো. ইকরাম আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণতা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান এবং বুয়েটের অধ্যাপক ইসরাত ইসলাম।
এবি/টিকে