অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা থাকা সত্ত্বেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. ওমর ফারুক।
দুর্নীতি দমন কমিশন ও ইসলামী ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
যদিও ব্যাংক-কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের এমডি ও সিইও নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগের জন্য ব্যক্তির যোগ্যতা ও উপযুক্ততা বাছাই করতে হয়। কোনো ব্যক্তি জালজালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলে ব্যাংকের এমডি হতে পারেন না।
বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত ঋণ আদায় না হলে গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মাঝেমধ্যে ব্যাংকের নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়। খুব কম ক্ষেত্রে এমডির নাম আসে। শুধু দুদকের মামলায় শীর্ষ স্তরের কারও নাম আসে।
দুদকের মামলার আসামি ব্যাংকের কোনো এমডি হতে পারে কি না, জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো মামলার আসামি ব্যাংকের এমডি হতে পারেন না।
আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রাহকের আমানত রক্ষায় নিয়োজিত থাকেন। সেই এমডি যদি অর্থ আত্মসাতের মামলায় আসামি হন তাহলে সেই ব্যাংকের আমানতকারীদের আমানত কে রক্ষা করবে? এটি খুবই দুঃখজনক বিষয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ এবং ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই ব্যাংকের এমডির অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও জালজালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ছেন ব্যাংকের এমডিরা। এটি খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকার এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
দুদকের মামলায় বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মো. ওমর ফারুক খানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালজালিয়াতি ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র ও দলিলাদি সৃজনপূর্বক নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের নামে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিরা দোষী সাব্যস্ত হলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, ইসলামী ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন কারণে অন্য অনেক ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণ করেছে। বাস্তবতা হলো, ওমর ফারুকের বিরুদ্ধেও একই অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তাদের মতে, ওমর ফারুক ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীদের সঙ্গে মুনাফেকি করেছেন, বেইমানি করেছেন।
এবি/টিকে