অনেকের কাছেই ব্রেড-অমলেট হলো সবচেয়ে দ্রুত, সহজ ও নির্ভরযোগ্য নাস্তা। এটি বানাতে যেমন সময় কম লাগে, তেমনই পুষ্টিগুণেও ভরপুর। ব্রেডের টেস্টি ভাব আর ডিমের নরম টেক্সচার একসঙ্গে খুব সুন্দরভাবে মিলে যায়। কিন্তু এই সাধারণ খাবারটি যদি প্রতিদিনের নাস্তায় জায়গা করে নেয়, তাহলে কী হয়?
নিউট্রেসি লাইফস্টাইলের প্রতিষ্ঠাতা ও পুষ্টিবিদ ডা. রোহিনি পাটিল আশ্বস্ত করে বলেন, ‘যদি উপকরণ ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে প্রতিদিন সকালে ব্রেড-অমলেট খাওয়া একেবারেই স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর।
কোন ব্রেড খাচ্ছেন এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
ডা. পাটিল জানান, ডিম হলো উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন-বি, কোলিন ও প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিডে ভরপুর, যা পেশি গঠন, বিপাকক্রিয়া ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। তাই ব্রেড-অমলেট কতটা পুষ্টিকর হবে, তার বড় অংশ নির্ভর করে কোন ধরনের ব্রেড ব্যবহার করা হচ্ছে, আর কিভাবে রান্না করা হচ্ছে তার ওপর।
এখানে বিভিন্ন ধরনের ব্রেডের পুষ্টিগত পার্থক্য দেওয়া হলো—
হোয়াইট ব্রেড : এটি অত্যন্ত পরিশোধিত, ফাইবার কম, দ্রুত হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় ফলে দ্রুতই আবার ক্ষুধা লাগে।
ব্রাউন ব্রেড : এটি আসলে হোয়াইট ব্রেড, শুধু ক্যারামেল রং মেশানো থাকে।
পুরো গমের ময়দা প্রথম উপাদান হিসেবে না থাকলে এটি খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়।
হোল হুইট ব্রেড : ফাইবার ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বেশি; ধীরে হজম হয়, অন্ত্রের স্বাস্থ্যে সহায়ক এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। বাজারে কিনতে হলে এটাই সেরা বিকল্প।
মাল্টিগ্রেন ব্রেড : এটি কেবল তখনই উপকারী, যখন এটি ‘হোল গ্রেন মাল্টিগ্রেন’।
অনেক বাণিজ্যিক মাল্টিগ্রেন ব্রেড আসলে পরিশোধিত ময়দা দিয়ে তৈরি হয়, ওপর থেকে কিছু বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয় মাত্র।
বিশেষজ্ঞরা জানান, অতিরিক্ত তেল, মাখন বা হোয়াইট ব্রেড ব্যবহারের অভ্যাস থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ এগুলো ক্যালরি বাড়ায় এবং রক্তে শর্করা বাড়ায়।
মেনুতে পরিবর্তন আনুন, পুষ্টিগুণ বাড়ান
নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ, সময় সময় উপকরণে একটু পরিবর্তন আনলে খাবারের ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বাড়ে। অমলেটে বেশি সবজি যোগ করা ও সম্পূর্ণ শস্যের ব্রেড বেছে নিলে নাস্তাটি আরো স্বাস্থ্যকর হয়।
তার মতে, বাজারের বা রাস্তার অমলেটের চেয়ে ঘরে তৈরি অমলেট অনেক বেশি নিরাপদ। স্ট্রিট-ফুড অমলেট সাধারণত বারবার ব্যবহৃত রিফাইন্ড তেল, অতিরিক্ত মাখন, নিম্নমানের ব্রেড এবং খুব কম সবজি দিয়ে তৈরি হয়, যা ক্যালরি ও ট্রান্স-ফ্যাট বাড়িয়ে দেয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণেও ডিম সহায়ক
ডা. পাটিল জানান, ডিমের উচ্চমানের প্রোটিন শরীরে তৃপ্তি বাড়ায়, রক্তে শর্করা স্থিতিশীল রাখে এবং মাঝখানের ক্ষুধা কমায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
তবে ব্রেড-অমলেটের প্রভাব নির্ভর করে কোন ব্রেড এবং কতটুকু তেল ব্যবহার হচ্ছে তার ওপর।
হোয়াইট ব্রেড + অতিরিক্ত তেল = বেশি ক্যালরি → দীর্ঘমেয়াদে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা
হোল গ্রেন ব্রেড + নিয়ন্ত্রিত তেল = ভালো তৃপ্তি, উন্নত ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ
সিদ্ধান্ত কী
সঠিক পরিমাণ, কম তেল ও সবজি–ফাইবার যোগ করে যদি খান, তবে ব্রেড-অমলেট প্রতিদিনের নাস্তায় থেকেও স্বাস্থ্যকর ও ওজনবান্ধব হতে পারে। ডা. পাটিলের সবশেষে বলেন, ‘পরিমাণ, তেলের ব্যবহার ও ফাইবার (যেমন সবজি বা ফল) যোগ করাই ব্রেড-অমলেটকে পুষ্টিকর ও সুষম নাস্তা বানায়।’
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এমকে/এসএন