এক শ্রেণির ক্ষমতালোভীরা সংস্কার এবং দৃশ্যমান বিচারকে গুরুত্ব না দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শুধু পাগল নয়, ডাবল পাগল হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, আজকে দুঃখ হয় এতগুলো মায়ের কোল সন্তানহারা হলো, এত মানুষ অন্ধ হলো। আমাদের যে মৌলিক দাবিগুলো ছিল। দেশে মৌলিক সংস্কার হবে। খুনিদের, টাকা পাচারকারীদের দৃশ্যমান বিচার হবে। এরপরে লেবেল প্লেইং ফিল্ড-জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, এক শ্রেণির ক্ষমতালোভীরা সংস্কার এবং দৃশ্যমান বিচারকে গুরুত্ব না দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শুধু পাগল নয়, ডাবল পাগল হয়ে গেছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আট দলের পাঁচ দফা দাবি হলো—জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি রেজাউল করিম বলেন, আপনারা মনে করেছিলেন ক্ষমতায় যাবেন, সেদিন ভুলে যান। বাংলাদেশ যারা ভালোবাসে, যারা ইসলামকে ভালোবাসে, যারা মানবতার কল্যাণ রক্ষার জন্য চেষ্টা করে তারা কিন্তু আজকে রাজপথে চলে এসেছে।
তিনি বলেন, রাজনীতি করার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণের জন্য। আমরা রাজনীতি করি শুধু নিজের ব্যক্তি এবং দলের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নয়, আমাদের রাজনীতি করার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর হুকুমও পালন করা। স্বাধীনতার পরে আজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে যে সুযোগ দিয়েছেন, এই সুযোগ যদি আমরা কাজে লাগাতে না পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদেরকে নিয়ে এক কলঙ্কজনক ইতিহাস রচনা করবে।
আবু সাঈদের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, এখনো চোখের সামনে আবু সাঈদের সেই দুই হাত প্রসারিত করার দৃশ্য ভেসে ওঠে। বৈষম্য দূর করার জন্যে, জালেমদের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্যে সে জীবন দিয়েছে, রাস্তায় লুটিয়ে পড়েছিল। সেই অনুভূতিতে প্রেরণা পেয়েই কিন্তু জানের ভয় না করে রাস্তায় নেমেছিলাম। ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের প্রতিবাদে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে বিজয় দান করেছেন। মুফতি রেজাউল করিম বলেন, আমি সবাইকে বলতে চাই, আজকের হাজার হাজার হাফেজ, আলেম ছাত্র, মায়ের কোলের সন্তান এবং ছাত্র-জনতা যে তাদের জীবন দিয়েছিল শুধু কি একজনকে নামিয়ে আরেকজনকে ক্ষমতা পাঠাবার জন্য? দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার জন্য, খুনিদের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য এবং আমাদের দেশে বসে যারা বিদেশিদের তাঁবেদার, আমাদেরকে গোলামের জিঞ্জির পরিয়েছে-তাদেরকে উৎখাত করে স্বাধীনভাবে আমাদের দেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য এরা জীবন দিয়েছিল।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আজকে তারা (বিএনপি) যদি বুঝতে ব্যর্থ হয়, আমরা তাদেরকে পরিষ্কারভাবে এই সমাবেশের মাধ্যমে বলতে চাই—আর আমাদের ধোঁকা দিতে পারবেন না। ধোঁকা দেওয়ার দিন শেষ, ইসলামের বাংলাদেশ। এ দেশকে রক্ষার জন্য আজকে আমরা রাজপথে নেমে এসেছি। রংপুর থেকে চাঁদাবাজ, ক্ষমতালোভী, টাকা পাচারকারী, যারা বিদেশিদের তাঁবেদারি বাস্তবায়ন করতে চায় তাদের বাংলার জমিন থেকে উৎখাতের আন্দোলন শুরুর আহ্বান জানান মুফতি রেজাউল করিম।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সালাহউদ্দিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, সাংগঠনিক সচিব হাফেজ মাওলানা আবু তাহের খান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সংগঠক মুফতি মাহমুদুল হাসান, জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামসহ আট দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
ইউটি/এসএন