জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে সম্পদের কোনো ঘাটতি নেই, ঘাটতি কেবল দুর্নীতিমুক্ত সৎ নেতৃত্বের।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট দলের বিভাগীয় মহাসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
আজহারুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বিগত পাঁচ দশকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশকে উন্নয়নের পথে নয়, বরং দুর্নীতির অন্ধকারে ডুবিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত সাড়ে ১৫ বছরে লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, যা প্রমাণ করে—দেশে সম্পদ ছিল, কিন্তু নেতৃত্বে সততা ছিল না।
তিনি বলেন, যারা আজ পরিবর্তনের কথা বলেন, তারা আবার যেন পুরনো ধারা বা দুর্নীতির রাজনীতিতে না ফেরেন—এটাই জনগণের প্রত্যাশা। যারা ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে নতুনভাবে গড়তে পারবেন, সেসব সৎ চরিত্রের নেতৃত্বকেই জনগণ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
এটিএম আজহারুল ইসলাম দাবি করেন, সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা গেলে বাংলাদেশ ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই দুর্নীতিমুক্ত হয়ে সিঙ্গাপুরের চেয়েও উন্নত দেশে পরিণত হতে পারে।
দেশে পরিবর্তনের ঢেউ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেশ একটি নতুন পথে হাঁটা শুরু করেছে।
এই পরিবর্তনকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে আগামীর নির্বাচনে জনগণকে মূল্যবান ভোট সঠিক জায়গায় দিতে হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, দেশে আইনের শাসন প্রায় ভেঙে পড়েছিল। এমনকি আদালত পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। দুর্নীতির দুঃশাসনে মানুষ এতটাই অতিষ্ঠ হয়েছিল যে, গণ-বিস্ফোরণ হলো, অনেকেই তাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে থাকেন।
কারণ আমরা শুধু দুঃশাসন থেকে নয়, আধিপত্যবাদের কবল থেকেও মুক্ত হয়েছি।
রংপুরের দীর্ঘদিনের বৈষম্যের শিকার হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে আজহারুল ইসলাম বলেন, রংপুর অঞ্চলের মানুষ সবসময়ই বঞ্চিত। আমি রংপুরের সন্তান হিসেবে দাবি রাখি-যারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নেবেন, তাদের অবশ্যই এই বৈষম্য দূর করতে হবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে নানা শক্তি বাধা দিচ্ছে। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছি না।
তাই তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। ফারাক্কা বাঁধের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাঁধ বাংলাদেশের চার কোটি মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাই পানি সংকট মোকাবেলা ও নদী উদ্ধারকে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বক্তব্যের শেষদিকে নিজ জীবনের ঝুঁকি এবং কারাবরণের কথা স্মরণ করেন এটিএম আজহার। তিনি বলেন, ফাঁসির দণ্ড নিয়ে আমি কারাগারে ছিলাম। যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারত। কিন্তু রংপুরের ছেলে আবু সাঈদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে গণবিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, তার ফলেই আমি মুক্তি পেয়েছি এবং আজ আপনাদের সামনে দাঁড়াতে পেরেছি।
সমাবেশে আট দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা পরিবর্তন, গণভোট এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। দুপুরে শুরু হওয়া এই সমাবেশে রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার হাজারো মানুষ অংশ নেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলামসহ আরো অনেকে।
আইকে/এসএন