সরকার ঘোষিত চাল আমদানির নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ায় ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। ৩০ নভেম্বর ছিল আমদানির শেষ দিন। গত চার মাসে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে বেনাপোল বন্দরে মোট ১৮ হাজার ১১ টন চাল আমদানি হয়েছে।
জানা যায়, দেশে চালের অস্থিতিশীল বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার সব বন্দর দিয়ে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২১ আগস্ট বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পুনরায় চাল আমদানি শুরু হয়। ওই সময় আগস্টে ১ হাজার ২৬০ টন, সেপ্টেম্বরে ৫ হাজার ৪৩৫ টন, অক্টোবরে ৫ হাজার ১৮৮ টন এবং নভেম্বর মাসে ৬ হাজার ১২৮ টন চাল আমদানি হয়েছে। আমদানি করা চাল ছাড়ের কাজ বেনাপোল কাস্টমস হাউজে চার থেকে পাঁচটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সম্পন্ন করছে। বন্দরের ৩১ নম্বর শেডে এসব চালের খালাস কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
বেনাপোল বাজারের চাল বিক্রেতা স্বপন জানান, ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হওয়ার পর বাজারে সব ধরনের চালের দাম কমেছে। প্রতি কেজিতে অন্তত ৩ থেকে ৪ টাকা করে কমে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি শুরুর আগে দাম অনেক বেশি ছিল। নতুন ধানের চাল বাজারে সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমবে। তাতে বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন হবে না।
অন্যদিকে বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে আমদানি করা ভারতীয় স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৪৮-৫০ টাকায় এবং শম্পা জাতের চাল ৬৬-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশীয় নতুন স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি কেজি ৪৭-৪৮ টাকায় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এখনও পুরোপুরি আমন ধানের চাল বাজারে আসেনি। আমন ধানের চাল উঠতে শুরু করলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দামও কমে আসবে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধি জসিম উদ্দীন বলেন, ‘চাল আমদানি শুরুর পর থেকে আমরা কাস্টমস হাউজে ছাড়ের কাজ করছি। চার মাস বন্ধ থাকার পর গত ২১ আগস্ট থেকে আবার বেনাপোল দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়। অধিকাংশ চাল ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে আমরা ছাড় করছি।’
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, ‘২১ আগস্ট থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়। প্রতিদিন চালের চালান আসেনি, মাঝে কমে গিয়েছিল। তবে সময়সীমার শেষ দিকে আমদানি বাড়ে। দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে চাল আমদানি হওয়ায় বাজার কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। আমন ধানের চাল বাজারে উঠলে দাম আরও কমে আসবে।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান বলেন, ‘এ বছরের ১৫ এপ্রিল সর্বশেষ চাল আমদানি হয়েছিল। পরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এলসি খুলে ২১ আগস্ট থেকে আমদানি শুরু করে। ২১ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০০ দিনের মধ্যে ৫৫ দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৮ হাজার ১১ টন চাল এসেছে। কৃষকরা এখন আমন ধান কাটছেন, ধান বাজারে উঠলে দেশের চালের ঘাটতি পূরণ হবে এবং দামও কমবে।’
বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ বলেন, ‘৩ মাস ১০ দিনে ভারত থেকে ১৫৫টি চালানে ৫৮০টি ট্রাকে করে ১৮ হাজার ১১ টন চাল আমদানি হয়েছে। ৩০ নভেম্বর, অর্থাৎ শেষদিনেই ৬ হাজার ১২৮ টন চাল এসেছে। নতুন করে সময় বাড়ানো হবে কি না এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। সরকার অনুমতি না দিলে চাল আমদানি বন্ধ থাকবে। আমদানি করা চাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
কেএন/টিকে