উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পিছিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী আগামী রোববার (৭ ডিসেম্বর) তাকে যুক্তরাজ্যে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে একটি গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (কাতারের পাঠানো) শুক্রবার আসছে না। সব ঠিক থাকলে সেটা শনিবার পৌঁছাতে পারে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘ম্যাডামের (বেগম জিয়া) শরীর যদি যাত্রার উপযুক্ত থাকে এবং মেডিকেল বোর্ড যদি সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে ইনশাল্লাহ ৭ তারিখ (রোববার) ফ্লাই করবেন।’
গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকাস্থ কাতার দূতাবাস থেকে জানানো হয়, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার জন্য দেশটির আমিরের বিমান-কাতার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে। চিকিৎসকদের সম্মতি পেলেই কাতার থেকে রওনা হবে। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিলম্বিত হচ্ছে।
এদিন রাতে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে বহন করার জন্য কাতার আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের কারিগরি সমস্যার কারণে যাত্রা বিলম্ব হবে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাতার থেকে উড্ডয়নের পর জানানো হবে।
এদিকে, আর অল্প কিছু সময়ের মধ্যে ঢাকার মাটিতে পা রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। বেলা পৌনে ১১টার পরপরই তার দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এরপর তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে যাবেন। এরপর কাতারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আবার যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওয়ানা করবেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টায় এবং লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হিথরো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৩০২ ফ্লাইটে করে তিনি দেশের উদ্দেশে রওনা করেন। এ সময় মা জুবাইদাকে বিদায় জানান মেয়ে জাইমা রহমান।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসকসহ মোট ১৮ জন সফরসঙ্গী হিসেবে লন্ডনে যাবেন। তারা হলেন- খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, ছোট ছেলে কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, ডা. ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. শাহাবুদ্দীন তালুকদার, ডা. নুরুদ্দীন আহমদ, ডা. রিচার্ড বিলি, ডা. জিয়াউল হক, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। আরও থাকবেন হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, সৈয়দ শামীন মাহফুজ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহকারী মো. আব্দুল হাই মল্লিক, সহকারী ব্যক্তিগত সচিব মো. মাসুদার রহমান, গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও গৃহকর্মী রুপা শিকদার।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যে নেয়াকে কেন্দ্র করে এভারকেয়ার হাসাতাল ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত বছরের ৫ আগস্টে গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া।
চিকিৎসার জন্য ১১৭ দিন লন্ডনে অবস্থান শেষে গত ৬ মে দেশে ফেরেন তিনি।
এরপর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে। সবশেষ গত ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বিএনপি চেয়ারপাসনকে। এরপর থেকে তিনি সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে রয়েছেন বলে জানিয়ে আসছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ হোসেনসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সবশেষ গত ১৩ দিন ধরে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
এমকে/এসএন