পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে আদিয়ালা কারাগারের বাইরে বসে রয়েছেন তার বোন আলীমা খান। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায়ও রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের বাইরে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
দিনভর আলীমার নেতৃত্বে চলা এই অবস্থানে যোগ দিয়েছেন দলের পিটিআইর কেন্দ্রীয় মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা, পিটিআই কেপি প্রাদেশিক সভাপতি জুনায়েদ আকবর খানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। পিটিআই বলেছে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার সাক্ষাতের অনুমতি থাকার কথা হলেও প্রতিবারই কারা কর্তৃপক্ষ তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে।
‘রাষ্ট্রই আইন ভাঙছে’
কারাগারে যাওয়ার পথে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় আলীমা অভিযোগ করেন, ‘রাষ্ট্র নিজেই আইন ভাঙছে, অথচ পিটিআই কোনো অবৈধ কাজ করছে না। আমরা যদি আইন মেনে চলি আর তারা আইন ভাঙে—তাহলে বুঝতে হবে, আমাদের দেশে কীভাবে ব্যবস্থা চলে।’
তিনি আরও বলেন, গত ১৪ মাস ধরে ইমরান খানের ব্যক্তিগত চিকিৎসককেও সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়নি। একজন চিকিৎসকের সাক্ষাৎ দিতে সমস্যা কোথায়? নওয়াজ শরীফ যখন জেলে ছিলেন, তখন সারাদিন তার সঙ্গে চিকিৎসক থাকতেন।
পরে আলীমা গাড়ি থেকে নেমে পিটিআই কর্মী ও সমর্থকদের বড় একটি দল নিয়ে আদিয়ালা কারাগারের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন। কিন্তু কারাগার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের গোরখপুর মার্কেটে গিয়ে দাঙ্গা পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর সেখানেই বসে পড়েন আলীমা।
এরপর আরেক দফা ভিডিও বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এটা অসাংবিধানিক ও অবৈধ। কেন ইমরান খানকে বিচ্ছিন্ন ও নির্যাতিত অবস্থায় রাখা হচ্ছে? তারা সংবিধান ভঙ্গ করছে।’
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘আমরা এখান থেকে নড়বো না। লাঠি মারুক বা গুলি করুক, যা খুশি করুক।’
‘মতবিরোধ থাকলেও শত্রুতা থাকা উচিত নয়’
অন্যদিকে, কারাগারের কাছাকাছি দাহগালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর আলী খান। তিনি বলেন, সাক্ষাতের অনুমতি মিললে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এখানে আসার অধিকার আমাদের আছে। আদালতের আদেশ রয়েছে। পরিবার ও আইনজীবীদের সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সম্মতিও হয়েছিল। তবুও আজ আমাদের থামিয়ে দেওয়া হলো।
তার মতে, রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকতে পারে, তবে শত্রুতা থাকা উচিত নয়।
উজমা খানের সাক্ষাতের পর উত্তপ্ত পরিস্থিতি
এর আগে, গত মঙ্গলবার ইমরানের আরেক বোন উজমা খান কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাইরে অপেক্ষমাণ পিটিআই সমর্থকদের সামনে তিনি ইমরানের বার্তা তুলে ধরেন, যা পরে তার ‘এক্স’ অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়। এই মন্তব্যগুলোতে সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে নিয়ে সমালোচনা ছিল, যা নিয়ে সেনা মুখপাত্র গত শুক্রবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইমরানকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ ও ‘আত্মমগ্ন’ বলে বর্ণনা করেন।
এরপর গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার উজমা ও আরও কয়েকজনের সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করে। আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার বলেন, কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী রাজনৈতিক আলোচনা নিষিদ্ধ; কিন্তু উজমার সাক্ষাতে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র: ডন
ইএ/এসএন