‘আমাদের চাওয়ার কিছু নাই। ভাই গেছে, ভাই তো আর পাব না; অন্তত বিচার যদি হয়! তাহলে সান্ত্বনা পাব যে, ভাইয়ের বিচারটা পেয়েছি।’— কণ্ঠ ভারী হয়ে এভাবেই বলছিলেন পুরোনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় ছাত্রলীগের হামলায় নিহত বিশ্বজিৎ দাসের বড় ভাই উত্তমকুমার দাস।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) তৃতীয় গেটসংলগ্ন শাঁখারীবাজার মোড়ে ‘বিশ্বজিৎ চত্বরে’ আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এ দাবি জানান তিনি। জবি কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে উত্তম কুমার দাস আরও বলেন, ‘১৩ বছর হয়ে গেছে, এখনো বিচার হয়নি। আমার একটাই দাবি—এই সরকার যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমার ভাইয়ের খুনিদের বিচার করে।’
শাখা শিবিরের সেক্রেটারি ও অদম্য জবিয়ান ঐক্যের জিএস পদপ্রার্থী আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, ‘বিশ্বজিৎকে হত্যার পর ছাত্রলীগের তৎকালীন ২১ জন নেতাকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই ৮ জনের মধ্যেও দু’জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। চারজনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবনে নামানো হয়েছে। এমনকি যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্য থেকেও দুইজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।’
শাখা শিবিরের সভাপতি ও অদম্য জবিয়ান ঐক্যের ভিপি পদপ্রার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের দিনটি বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের আগের দিন। পুরোনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে, আদালত প্রাঙ্গণের ঠিক সামনে দিবালোকে শুধু বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে এই ঢাকা শহরের মানবতাকেও। আমাদের স্বপ্ন ছিল জুলাই আন্দোলনের পর এমন একটি সমাজ গড়ে তুলব, যেখানে মানুষের বাক্স্বাধীনতা থাকবে, মানুষের স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার থাকবে কিন্তু আমরা দেখেছি ৫ আগস্টের পরেও মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে পাথর দিয়ে পৈশাচিক কায়দায় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকে দেখতে চাই না। আমরা এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে প্রত্যেক মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ককটেল বিস্ফোরণের পর ধাওয়া করে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। বিশ্বজিৎ ওই সময় লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে হেঁটে শাঁখারীবাজারের দোকানে যাচ্ছিলেন।
বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এবি/টিকে