কোটি টাকা চাঁদার দাবিতে অপহরণ করে নির্যাতনের অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আদালতে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিলাস মন্ডলের আদালতে মামলাটি দাখিল করেন দেবহাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো: আল ফেরদাউস আলফা।
বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাউদ্দীন, সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মহিদুল ইসলাম, আদালতের সাবেক পিপি আব্দুল লতিফ ও তার ছেলে মো: রাসেল।
মামলার বিবরণীতে বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে সদর উপজেলার বাঁকাল চেকপোস্টে বাদীর দেড় কোটি টাকার ভারতীয় সামুদ্রিক মাছ জব্দ করে বিজিবি। পরে বাদীর বৈধ কাগজপত্র বিজিবির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু বিজিবি কাগজপত্র যথাযথ বুঝতে না পেরে সেই মাছ সাতক্ষীরা সদর থানায় প্রেরণ করে। বৈধ কাগজ পাঠালেও মাছ ছাড়া হবে না এমন হুমকি দিয়ে সদর থানার তৎকালীন ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ফোনে বাদীর কাছে দেড় কোটি টাকা দাবি করেন।
একপর্যায়ে বাদী ফোনের সুইচ অফ করতে বাধ্য হন। সেদিন মধ্যরাতে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাউদ্দীন ও ডিবির ওসি মহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০/১২ জন সাদা পোশাকধারী পুলিশ বাদীর শহরের পলাশপোল এলাকার বাড়িতে যেয়ে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। সেসময় বাড়িতে থাকা ১৫ লাখ টাকা দিয়েও রক্ষা পাননি তিনি। বাদীর ভাই আব্দুল আলিম ও বাদীকে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে তুলে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন চালায় পুলিশ। চাঁদা না দেওয়ায় সাতক্ষীরা সদর থানায় মাছ আটকের ঘটনায় করা মামলায় তাদেরকে অজ্ঞাতনামা আসামী হিসেবে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এদিকে পরস্পর যোগসাজসে জব্দকৃত দেড় কোটি টাকার মাছ মাত্র ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বিক্রি দেখিয়ে বাকী টাকা আত্মসাৎ করে আসামীরা।
মামলার বিবরণীতে আরও বলা হয়, মামলার জামিন করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বাদীর কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য করেন সাতক্ষীরা জজ আদালতের তৎকালীন পিপি আব্দুল লতিফ ও তার ছেলে মো: রাসেল।
মামলার বাদী আল ফেরদৌস আলফা বলেন, পুলিশ আমার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা করেছিল সেটি নিষ্পত্তি হতে দেরী হওয়ায় মামলাটি দাখিল করতে বিলম্ব হয়েছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এড. খায়রুল বদিউজ্জামান বলেন, এ মামলার পরবর্তী ধার্য দিন নির্ধারিত হয়েছে ২০২৬ সালের ২০ এপ্রিল। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিজিবি দুই ট্রাক মাছ ধরে থানায় জমা দেয়। বিজিবি বাদী হয়ে মামলাটি দাখিল করে। মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর তদন্ত করে ডিবি পুলিশ। বিজিবি আটক করলো মামলা দিল এখানে আমাদের দায়টা কোথায় ? আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে শুনেছি। আশাকরি তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উঠে আসবে।
মামলায় অভিযুক্ত অপর আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
টিজে/টিকে