প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এরই মধ্যে তাঁর ভাষণ রেকর্ড করা হয়েছে। এই ভাষণেই থাকছে ত্রয়োদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল।
তফসিল ঘোষণা মানে হলো, নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা। অর্থাৎ ভোটের তারিখ কবে, কবে থেকে প্রার্থীরা মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন বা জমা দেবেন এ ধরনের বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা। মূলত এর মাধ্যমেই একটি নির্বাচনের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয়ে যায়।
তফসিলে সাধাণত বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করা হয়। যেমন, প্রার্থিতার জন্য মনোনয়ন দেওয়ার শুরু ও শেষের সময়, মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়, যাচাই–বাছাইয়ের সময়, মনোনয়ন বাতিল, প্রতীক বরাদ্দ, ভোটের তারিখ ঘোষণা, ভোটের সময়, গণনা ও ফলপ্রকাশ।
নির্বাচন কমিশন আগেই জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।
এবার জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি, গণভোটের তফসিলও একই সঙ্গে ঘোষণা করবেন সিইসি। পাশাপাশি তফসিল ঘোষণার পরপর নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাও কিছুটা বাড়বে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে কিছু ক্ষমতা দিয়েছে। আর এই ক্ষমতা স্পষ্ট করা হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিওতে।
তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন চাইলে প্রশাসনে রদবদল আনতে পারে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধস্তন কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা ছাড়া বদলি করা যাবে না।
অন্যদিকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে যদি নির্বাচন কমিশন মনে করে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারিকে বদলি করা প্রয়োজন, তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। এজন্য কমিশন লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব সে বদলি কার্যকর করতে হবে।
তফসিল ঘোষণার পর কোনো প্রার্থী যদি নির্বাচনী আইন বা আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেন, তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারবে। এমনকি অভিযোগ গুরুতর হলে প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে।
এছাড়াও নির্বাচন কমিশনার রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। বাংলাদেশে সাধারণত জেলা প্রশাসকরাই নির্বাচনকালীন সময় রিটার্নি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে। মূলত এই দায়িত্ব দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশন থেকেই।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যেভাবে দায়িত্ব দেবেন একজন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সেভাবেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
নির্বাচনের সময় একজন রিটার্নিং কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটের মাঠে কয়টি দল
বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৭। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। ফলে এবারের নির্বাচনে বিএনপি–জামায়াত–এনসিপিসহ বাকি দলগুলোই অংশ নিচ্ছে।
২০০৮ সালে যখন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা শুরু হয়, সে সময় দল ছিল ৩৮টি।
প্রথম সংসদ নির্বাচনে ১৪টি দল অংশ নেয়। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯ দল, তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮টি দল; চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আটটি দল অংশ নিয়েছিল। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ৭৫টি দল অংশ নেয়।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে তফসিল দিয়ে তিনবার পরিবর্তন করতে হয়। অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে এতে অংশ নেয় ৪১টি দল। সপ্তম সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৮১টি দল এবং অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৫৪টি দল অংশ নেয়।
নবম সংসদের সময় ভোটে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয় আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিজ এলাকার ১% সমর্থন দেখাতে হয়। নিবন্ধিতরা দলীয়ভাবে ভোট করার সুযোগ পায় আর স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখা হয়। তখন ওই নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৮টি দল অংশ নেয়।
দশম সংসদ নির্বাচনে দল ছিল ১২টি। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন করে এবং ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড হয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি দল ভোটে অংশ নেয়। সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৮টি দল ভোটে অংশ নেয়। এসময় নিবন্ধিত দল ছিল ৪০টি।
ইএ/এসএন