কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সমুদ্রবক্ষে (মহেশখালী চ্যানেল) নির্মিত জেটিসহ অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
সংস্থাটি মনে করে, নৌ চ্যানেলের সুরক্ষায় এই স্থাপনাগুলো সরিয়ে ফেলা জরুরি। একইসঙ্গে মালামাল পরিবহন ও ফোরশোর ভূমি ব্যবহারের জন্য ভ্যাট-আয়করসহ মোট ৪ কোটি ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩০ টাকা বকেয়া রাজস্ব আদায়ের সুপারিশও করা হয়েছে।
গত বুধবার (১০ই ডিসেম্বর) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই সুপারিশ তুলে ধরেন বিআইডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।
চিঠিতে বলা হয়, কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মহেশখালী চ্যানেলের ভেতরে জেটি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে নৌ চ্যানেলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও করণীয় নির্ধারণে বিআইডব্লিউটিএ একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রতিবেদনেই স্থাপনা উচ্ছেদ এবং বকেয়া রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি উঠে আসে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজে মালামাল পরিবহনের জন্য বিআইডব্লিউটিএর ফোরশোর ভূমি ব্যবহার, মালামাল লোডিং-আনলোডিং এবং অস্থায়ী জেটি নির্মাণ বাবদ বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে ভ্যাট ও আয়করসহ মোট ৪ কোটি ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৮-৩০ টাকা পাওনা রয়েছে। এই বকেয়া আদায়ে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ তাদের পত্রে মোট ৪টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পেশ করেছে
১. স্থাপনা অপসারণ: মহেশখালী চ্যানেলে পাইলিং করে বিমান অবতরণে সহায়ক যে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তা অপসারণের জন্য প্রথমে বেবিচককে চিঠি দেওয়া যেতে পারে। বেবিচক যদি কাঠামো অপসারণ না করে, তবে বিআইডব্লিউটিএ নিজেই উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
২. পরিবেশগত সমীক্ষা: রানওয়ে সম্প্রসারণের ফলে মহেশখালী চ্যানেল ও তৎসংলগ্ন নৌপথগুলোতে ভবিষ্যতে কী প্রভাব পড়বে, তা জানতে বেবিচকের অর্থায়নে একটি বিশদ সমীক্ষা পরিচালনা করা। এতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে Hydromorphological Study, Hydrodynamic Sediment Transport Modeling, Flow Interruption এবং Environmental and Social Impact Assessment অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৩. বকেয়া রাজস্ব আদায়: কর্তৃপক্ষের ভূমি ব্যবহার ও জেটি নির্মাণ বাবদ পাওনা ৪ কোটি ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩০ টাকা আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪. আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা: মহেশখালী চ্যানেল রক্ষার স্বার্থে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বেবিচক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে জরুরি ভিত্তিতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা।
চিঠিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, সুপারিশগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে আগেও অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি জানানো হয়নি।
প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা নিয়ে জটিলতা কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সরকার বর্তমানে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প: ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা, রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প: ৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন নির্মাণ: ২৭৭ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে 'আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর' ঘোষণা করা হলেও, মাত্র ১২ দিনের মাথায় ২৪ অক্টোবর সেই ঘোষণাটি বাতিল করা হয়। এই পরিস্থিতির মধ্যেই রানওয়ে সম্প্রসারণ নিয়ে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হলো।
আইকে/টিকে