সম্প্রতি চীনে ছড়িয়ে পড়া রহস্যময় করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ৮১ এবং ক্রমাগত এই সংখ্যা বেড়েই চলছে।
যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, ভারত, ইসরায়েল, নেপাল, দক্ষিণ-কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে রহস্যময় এই নতুন প্রজাতির করোনাভাইরাস। তবে, আশার কথা হলো বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সংক্রামণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
তবে বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষ এখন এই নতুন ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। কারণ এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা টিকা অথবা কোনো ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।
ভাইরাসটির সব থেকে ভয়ানক দিক হলো এটি আক্রান্ত ব্যক্তি বা প্রাণীর দেহ থেকে খুব দ্রুত আর সহজে সুস্থ ব্যক্তি বা প্রাণীদেহে সংক্রামণ ঘটাতে পারে। এটি সাধারণ ফ্লু’য়ের ভাইরাসের মতোই সুস্থ ব্যক্তির মুখ, নাক, কান, চোখ দিয়ে দেহের ভেতর প্রবেশ করে।
আসুন জেনে নিই, করোনাভাইরাসের সংক্রামণ থেকে বাঁচতে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে-
জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরিধান করুন
যেহেতু আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে আপনার দেহের ভেতর প্রবেশ করতে পারে, তাই বাইরে বা জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরিধান করুন। এক্ষেত্রে সার্জিক্যাল মাস্ক বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাস্ক পরিধান করতে পারেন। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রুখতে মাস্ক বেশ কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। এক মাস্ক বার বার ব্যবহার করবেন না, প্রয়োজনে পরিষ্কার করে ব্যবহার করুন।
আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন
যেহেতু আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ভাইরাসটি সংক্রামিত হয়, তাই কেউ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে তার কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। আক্রান্ত ব্যক্তির উচিত নিরাপদ দূরত্বে থাকা, যাতে ভাইরাসটি ছড়াতে না পারে।
সাবান দিয়ে হাত ধৌত করুন
বাইরে থেকে ফিরে বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে ভুলবেন না। অপরিষ্কার হাত দিয়ে নিজের নাক-মুখ-চোখ-কান স্পর্শ করবেন না। বাইরে আপনি যেসব জায়গা স্পর্শ করেছেন তা থেকে আপনার হাতে ভাইরাস লেগে থাকতে পারে। হাত না ধুয়ে খাবার খেলে বা নাক-মুখ স্পর্শ করলে ভাইরাসটি আপনার দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে।
মাংস ভালো করে সেদ্ধ করুন
যেহেতু প্রাণীদেহ থেকে সহজে ভাইরাসটি মানবদেহে সংক্রমিত হতে পারে তাই বয়লার মুরগি, খাসি, গরু ও মহিষের মাংস খাওয়ার আগে তা ভালো করে সিদ্ধ করে নিন। রান্নার আগে ভালো করে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে মাংস ধুয়ে নিন এবং ধোয়া শেষে সাবান দিয়ে নিজের হাত ধুয়ে নিন।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আপনাকে যেকোনো ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণ থেকে নিরাপদ থাকতে সাহায্য করে। নিজেকে এবং নিজের চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। বাইরে যে জামাকাপড় ব্যবহার করছেন সেগুলি ঘরের ভেতর ব্যবহার করবেন না। টাওয়াল, রুমাল, গামছা প্রভৃতি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
গ্লাভস পরিধান করতে পারেন
রহস্যময় ভাইরাসটি কোনো কিছু স্পর্শ করার মধ্য দিয়ে আপনার হাতে লেগে যেতে পারে, আর পরবর্তীতে হাত থেকে নাক, মুখ, চোখ বা কান দিয়ে দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। তাই বাইরে, জনবহুল এলাকায় বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে হ্যান্ড গ্লাভস বা হাতমোজা ব্যবহার করতে পারেন।
পানি, ফল ও বিশ্রাম
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, ফল খান এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করুন। এতে আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে এবং যেকোনো সংক্রামণের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
অসুস্থতা দেখা দিলে ঘাবড়ে যাবেন না
হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘাবড়ে যাবেন না। সাধারণ ঠাণ্ডা, ফ্লু, সর্দি-কাশি এবং করোনাভাইরাসের উপসর্গ যেহেতু প্রায় একই তাই লক্ষণগুলি দেখা দিলে ঘাবড়ে যাবেন না। সব ভাইরাস করোনাভাইরাস নয়, অসুস্থতা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তথ্যসূত্র: ডয়েচেভ্যালে ও ডেইলি মেইল
টাইমস/এনজে/জিএস