আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে জরুরি ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী এবং নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদল উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে সিএমএইচে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরিবারের অনুরোধে হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আইসিউ সাপোর্টেড অ্যাম্বুলেন্স, লাইফ সাপোর্ট ও রক্ত প্রস্তুত করে রাতেই তাঁকে ঢামেক থেকে স্থানান্তর করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাহিদ রাহান জানান, “গুলিটি মাথার ভেতর দিয়ে ক্রস করে গিয়ে ব্যাপক মস্তিষ্ক ক্ষত তৈরি করেছে।
বাম কান দিয়ে ঢোকা গুলি ডান দিকে বের হয়ে গেছে। এতে ম্যাসিভ ব্রেইন ইনজুরি হয়েছে এবং ব্রেইন স্টেমেও আঘাত লেগেছে। তাঁকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসে রাখা হয়েছে। জীবনের ন্যূনতম চিহ্ন আছে, তিনি পুরোপুরি নিস্তেজ হননি। তবে অবস্থা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল। নিশ্চয়তার কিছু বলা যাচ্ছে না।”
ডা. জাহিদ আরও জানান, গুলি বের হওয়ার স্থানে খুলির হাড় অপসারণ করে মস্তিষ্কের চাপ কমানো হয়েছে। মাথার ভেতরের রক্ত ও জমে থাকা ফ্লুইড অপসারণ করা হলেও চাপ এবং ব্লিডিংয়ের কারণে অবস্থা বারবার ওঠানামা করছে। চিকিৎসকদের ভাষায়, সন্ধ্যার পর হাদির নাক ও গলা দিয়ে তীব্র রক্তপাত শুরু হয়। ইএনটি সার্জনরা তা নিয়ন্ত্রণে আনেন। কিছু সময় তিনি হেমোডাইনামিক্যালি স্টেবল ছিলেন, তবে তা স্থায়ী নয়।
ডা. জাহিদ বলেন, ‘নিজস্ব শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষমতা এখনও আছে, কিন্তু কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়া তাঁকে রাখা সম্ভব নয়। প্রতিটি মিনিটই ঝুঁকিপূর্ণ।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী মো. সায়্যেদুর রহমান জানান, “ঢামেক হাসপাতালে আনার সময় হাদির জিসি স্কোর ছিল মাত্র ৩ -যা গভীর অচেতন অবস্থাকে নির্দেশ করে। চিকিৎসা চলাকালে তিনি একবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে গিয়েছিলেন। মস্তিষ্কের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ডিকম্প্রেশন ও ক্রেনিওটমি করা হয়েছে। তবে দ্রুত ওঠানামার কারণে তাঁকে স্টেবল রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়।”
চিকিৎসকরা জানান, বাম দিকের খুলি খোলা রাখা হয়েছে কারণ সেই অংশে মগজের ক্ষত বেশি। চাপ কমাতে ভেতরের রক্ত ও পানি অপসারণ করা হয়েছে। হাদির অবস্থা প্রতি মুহূর্তে ওঠানামা করছে। তিনি পুরোপুরি নিস্তেজ নন, তবে জীবনের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। এখন দেশবাসীর দোয়া প্রয়োজন।
পিএ/টিএ