শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি৭ (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই জোটের অধিকাংশ দেশই ইউরোপের। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের নিশানায় থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) জোটভুক্ত। তাই এই জোটের বিকল্প হিসেবে রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপানকে নিয়ে ‘কোর-ফাইভ’ বা ‘সি৫’ নামে একটি নতুন ‘সুপার পাওয়ার ক্লাব’ গড়ার ভাবনা খতিয়ে দেখছেন তিনি।
এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন কোনও মন্তব্য না করলেও মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো জানিয়েছে, গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রের একটি দীর্ঘ, অপ্রকাশিত সংস্করণে এই নতুন জোটের ধারণা উঠে এসেছে। সাময়িকীটি ওই দীর্ঘ পরিকল্পনার অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে না পারলেও ডিফেন্স ওয়ান এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
পলিটিকো’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কৌশলপত্রটি একটি কোর ফাইভ বা সি৫-এর প্রস্তাব করেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত এবং জাপান থাকবে। জি৭-এর মতো নির্দিষ্ট ইস্যুতে নিয়মিত (এই জোটের) শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সি৫-এর প্রস্তাবিত প্রথম এজেন্ডা–মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা, বিশেষত ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ।’
পলিটিকো জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস এই ধরনের কোনো নথির অস্তিত্ব স্বীকার করেনি। প্রেস সেক্রেটারি হান্না কেলি বলেছেন, ৩৩ পৃষ্ঠার সরকারি পরিকল্পনার বাইরে ‘কোনো বিকল্প, ব্যক্তিগত বা গোপন সংস্করণ’ নেই।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, নতুন জোটের ভাবনা ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই হোয়াইট হাউসের পক্ষে সি৫ গঠন অকল্পনীয় কিছু নয়।
বাইডেন প্রশাসনের সময় মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে ইউরোপ বিষয়ক পরিচালকের দায়িত্বে থাকা টরি টসিগ বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে বিশ্বকে দেখেন, এটি (নতুন জোট) সেই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ট্রাম্প আদর্শহীনভাবে, শক্তিশালী খেলোয়াড়দের প্রতি সহানুভূতি দিয়ে এবং নিজেদের অঞ্চলে প্রভাব-বলয় ধরে রাখা অন্যান্য শক্তিধর দেশের সঙ্গে সহযোগিতায় বিশ্বাসী।’
এদিকে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজের সহকারী হিসেবে কাজ করা মাইকেল সোবোলিকের মতে, সি৫ গঠন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের চীননীতি থেকে একটি বড় বিচ্যুতি। তার ভাষায়, ‘ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে পরাশক্তিদের প্রতিযোগিতার ধারণা মেনে চলেছিলেন। তখন চীনকেও সে দৃষ্টিতেই দেখা হতো। তবে এটি (সি৫) সে অবস্থান থেকে প্রস্থান।’
মার্কিন মিত্ররা নতুন জোট গঠনের সম্ভাবনাকে ‘বিতর্কিত শাসকদের বৈধতা দেয়া’ হিসেবে দেখছেন। এক্ষেত্রে ইউরোপের ওপর রাশিয়াকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এতে পশ্চিমা ঐক্য ও ন্যাটো দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা করছেন ইউরোপীয় বিশ্লেষকরা।
টিকে/