পিরোজপুরে ব্যাহত ফেরি চলাচল, ভোগান্তিতে হাজারো যাত্রী

‎শীতের কুয়াশা ভেদ করে নদীর পাড়ে ভিড় জমেছে বাস, ট্রাক আর পণ্যবাহী গাড়ির সারি। ইঞ্জিন বন্ধ করে চালকরা দাঁড়িয়ে উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে নদীর দিকে। কিন্তু নদী যেন নাছোড়বান্দা, ডুবোচর জেগে উঠে আটকে দিয়েছে যাত্রার গতি। পিরোজপুরের টগরা–চরখালী ফেরিঘাটে এ চিত্র এখন নিত্যদিনের।

‎দক্ষিণাঞ্চলের নদীবহুল জেলা পিরোজপুরে সড়ক যোগাযোগের অন্যতম ভরসা টগরা–চরখালী ফেরিঘাট। বরগুনা, পাথরঘাটা, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা থেকে ঢাকাগামী অন্তত ৮ থেকে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ রুটের হাজার হাজার যাত্রী ও শতাধিক যানবাহন প্রতিদিন এই ফেরির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বলেশ্বর ও কঁচা নদীর মোহনায় শীত এলেই জেগে ওঠে ডুবোচর, আর সেই সঙ্গে থমকে যায় মানুষের জীবনযাত্রা।

‎ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীর দুই পাড়ে আটকে থাকতে হয় যাত্রী ও চালকদের। কেউ অফিসে পৌঁছাতে দেরি করছেন, কেউ আবার সময়মতো মালামাল পৌঁছাতে না পারায় পড়ছেন আর্থিক ক্ষতির মুখে। মাঝ নদীতে ফেরি আটকে গেলে শুরু হয় অপেক্ষার দীর্ঘশ্বাস। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শীত মৌসুম এলেই বলেশ্বর ও কঁচা নদীর মোহনায় চর জেগে ওঠে। অস্থায়ী কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় দুর্ভোগ যেন বছরের পর বছর মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। অথচ এই চরখালী ফেরিটি ঢাকার সঙ্গে পিরোজপুরের একটা বড় অংশের যোগাযোগ রক্ষা করে, অন্যদিকে মংলা বন্দরের সঙ্গে পণ্য পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এই ফেরিঘাট।

‎ভুক্তভোগী যাত্রী মঠবাড়িয়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, নদীতে ভাটার সময় ডুবোচরের কারণে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। কখন নদী পার হতে পারবো তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। যাত্রীরা দুর্ভোগে থাকলেও দেখার কেউ নেই। ‎ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ডুবচরে ফেরি আটকে গেলে মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়ি। সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি দ্রুত যেন নদীটি খনন করে এই সমস্যার সমাধান করা হয়।

‎এই নদীতে ট্রলারে যাত্রী পারাপার করেন আউয়াল শেখ। তিনি বলেন, ‘দিনে দুইবার নদীতে ভাটা হয়। এ সময় নদীতে দুবোচার জেগে যায়। দুই ভাটায় আমাদের পাঁচ ছয় ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। আমাদের আয় এখন অর্ধেক হয়ে গেছে, এতে আমাদের সংসার চালাইতে কষ্ট হয়। নদী যদি তাড়াতাড়ি না কাটা হয় তাইলে আমাদের না খাইয়া মরতে হবে।’

‎রিয়াদুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘এই রুটে প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি চলে। ভাটার সময় গাড়ির সিরিয়াল লেগে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে বইসা থাকতে হয়। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি।’

‎এ বিষয়ে পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবু জাফর মো. রাশেদ খান বলেন, টগরা চরখালী ফেরিঘাটের দুই পাশের নদী খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেকানিক্যাল ডিভিশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

‎এদিকে, যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি নিয়মিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত নাব্যতা সংকট নিরসন করা না হলে এ রুটে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

ইউটি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ফুটবলের রাজপুত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ বলিউড বাদশার Dec 13, 2025
img
নতুন বছরের শুরুতেই ‘গোলাপ’ নিয়ে পর্দায় ফিরছেন পরী Dec 13, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যমুনায় হাদির পরিবার Dec 13, 2025
img
আজ ঢাকায় আসছেন শোয়েব আখতার Dec 13, 2025
img
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ Dec 13, 2025
img

দেশে চলমান সংকট ইস্যু

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি Dec 13, 2025
img
৪০ মিনিট অপেক্ষা করেও পুতিনের দেখা পেলেন না শেহবাজ শরীফ Dec 13, 2025
img
মনোনয়ন দাখিলে বিস্তারিত পদ্ধতি জানিয়ে পরিপত্র-২ জারি করেছে ইসি Dec 13, 2025
img
নির্বাচনী প্রচারে সর্বাধিক ২০টি বিলবোর্ড, লাউড স্পিকারে বিধিনিষেধ Dec 13, 2025
img
ওসমান হাদির বাড়ির জানালা ভেঙে চুরি Dec 13, 2025
img
কাস্পিয়ান সাগরে রুশ তেল অবকাঠামোয় ফের হামলা কিয়েভের Dec 13, 2025
img
বিষণ্ণতা কতটা ভয়াবহ আমি বুঝি : শুভশ্রী Dec 13, 2025
img
জমেলা টাওয়ারে আগুন নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ বেজমেন্টের দোকান: ফায়ার সার্ভিস Dec 13, 2025
img
দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত ভারতের ৪ ক্রিকেটার Dec 13, 2025
img
যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতসহ লাখো মানুষ Dec 13, 2025
img
দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার বাতাসও ‘অস্বাস্থ্যকর’ Dec 13, 2025
img
ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধের ঘটনায় ছাত্র মৈত্রীর প্রতিবাদ Dec 13, 2025
img
সূর্যবংশীকে ছাপিয়ে পাকিস্তানি ব্যাটারের রেকর্ড Dec 13, 2025
img
সিলেটে স্থান পেল ইংল্যান্ডের ইথান ব্রুকস Dec 13, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যমুনায় যাচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা Dec 13, 2025