ভারত সরকারের মদদ ছাড়া আ.লীগ এই ধরনের পরিকল্পনা করতে পারে না : নাহিদ ইসলাম

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ভারতের জড়িত থাকার ইঙ্গিত করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সব পরিকল্পনা করতেছে দিল্লিতে বসে। ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ মদদ ছাড়া আওয়ামী লীগ এই ধরনের পরিকল্পনা করতে পারে না। এ ধরনের তৎপরতা, জঙ্গি তৎপরতা করতেছে, ফলে অবশ্যই ভারত সরকারকে আমাদের এখানে যারা ভারতীয় দূতাবাস আছে, তাদের একাউন্টেবল করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ডেকে বলতে হবে যে সেখানে একজন মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত গণহত্যাকারীকে ভারত সরকার আশ্রয় দিয়ে অলরেডি তারা একটা নৈতিক অপরাধ করেছে। এখন তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সেই আওয়ামী লীগকে তারা সহায়তা করতেছে।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে বৈঠক শেষে যমুনার সামনে তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমাদের নেতা-নেত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে হবে না, নেতাদের নিরাপত্তা দিয়ে জুলাই টিকে থাকবে না। সামগ্রিকভাবে সমাজ থেকে, রাজনীতি থেকে যদি আওয়ামী লীগের প্রশ্নের সুরাহা আমরা করতে না পারি, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে আমরা যদি গণপ্রতিরোধ বজায় রাখতে না পারি, তাহলে আসলে আমরা, আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।

তিনি আরও বলেন, জনগণই আমাদের নিরাপত্তা। আমরা সেই জনগণের কাছেই আমাদের নিরাপত্তা নিতে হবে। রাজনৈতিক দায়িত্বটা আমাদের পালন করতে হবে। সরকার অবশ্যই প্রশাসনিকভাবে করবে। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের লোকেরা আছে, পুলিশের বিভিন্ন জায়গায় আছে এবং মিডিয়া থেকে শুরু করে নানান ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগ আসছে। সরকারকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে কাজ করা জরুরি। তিনি কোর্টপাড়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় থাকা সব ফ্যাসিবাদ বিরোধী দলকে নিজ নিজ মতাদর্শী লোকজনকে একত্রিত (মোবিলাইজ) করার আহ্বান জানান।

তার মতে, এই প্রতিরোধ কেবল রাজনৈতিক মাঠের জন্য নয়, বরং বিভিন্ন সেক্টরে (যেমন: কোর্ট, মিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়, এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গন) সম্মতি তৈরি করা হচ্ছে। এই জায়গাগুলোতে আওয়ামী লীগকে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। পাশাপাশি, তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে এবং ভারতকে জবাবদিহি (একাউন্টেবল) করার পদক্ষেপ নেয়। এই তিনটা জায়গায় যদি আমরা কাজ করতে পারি, সুষ্ঠু নির্বাচন স্বার্থে এই তিনটা জিনিস আমাদের অবশ্যই বলা লাগবে।

তিনি বলেন, তিনটি দলের নেতাদের ডেকেছিলেন। আমরা একত্রে আলোচনা করেছি। সেখানে শরিফ ওসমান হাদি তার পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। তার মা ছিলেন। মূলত এটা গতকালকের যে ঘটনা এটা তো শুধু আসলে একজন ব্যক্তির সঙ্গে বা একজন প্রার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা না। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনাও না। এই ষড়যন্ত্র ছক আকছে নির্বাচনকে ঘিরে। সেটার একটা শুরু বলা যেতে পারে। ফলে এই পরিবেশ এই ধরনের আমরা কীভাবে একত্রে মোকাবিলা করব এবং সেটার জন্য যেই ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন সেটা যাতে অটুট থাকে। আমরা জানি নির্বাচনের রাজনীতিতে আমরা প্রতিযোগিতা করব, প্রতিদ্বন্দীতা করব। একে অন্যের বিরুদ্ধে হয়তো বলব কিন্তু সেটা যাতে কখনোই একটা সীমাকে অতিক্রম না করে। আওয়ামী লীগকে যাতে কোনো সুযোগ সুবিধা করে না দেয়, এই ব্যাপারে আমরা সবাই ঐক্যমত পোষণ করেছি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানকে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে ভেরিফাই করা হচ্ছে, মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় টকশোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতির মাঠে আসার একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, নরমালাইজিং প্রসেস আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখছি আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা গোপন মিটিং করার সুযোগ পাচ্ছে। আমরা কোর্ট পাড়ায় দেখতে পাচ্ছি যে জয়বাংলা স্লোগান হচ্ছে। আমরা টকশোতে দেখছি এরকম আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবীরা আসছে। আমরা ভোটের মাঠে দেখছি যে জাতীয় পার্টিকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। একটা পরিকল্পিত আয়োজন আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে পুনর্বাসিত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীরা নানা নামে কিন্তু আওয়ামী লীগ সমাজে কথা বলার চেষ্টা করছে, কাজ করছে। প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা বলেছি, সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ওপর সে আস্থাটা থাকতে হবে, যাতে তারা সবাইকে নিরাপত্তা দিতে পারে। অবশ্যই ওসমান হাদিকে যারা হত্যা চেষ্টা জড়িত, আমরা তাদের তো অবিলম্বে আজকের মধ্যে আমরা গ্রেপ্তার চেয়েছি এবং শুধু তারাই নয় বরং এই পরিকল্পনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকেও যাতে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়।

টিজ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার Dec 16, 2025
img
হাদির ঘটনায় ফয়সাল করিমের এক সহযোগী গ্রেপ্তার Dec 16, 2025
img
আজ মহান বিজয় দিবস Dec 16, 2025
img
আরও দুই মামলায় আলোচিত ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী শ্যোন আটক Dec 16, 2025
img
দিল্লিতে ২৭টি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতি হবে মেসির ফুসফুসের! Dec 16, 2025
img
মানিকগঞ্জে ১০ মিনিটের ব্যবধানে দুই ককটেল বিস্ফোরণ Dec 16, 2025
img
মেহেরপুরে এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ এনসিপি নেতার বাবা Dec 16, 2025
img
বিরাট-রোহিত ও বাবরকে ২০২৭ বিশ্বকাপে দেখতে চান শোয়েব আখতার Dec 15, 2025
img
মাল্টা উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবি, ৫৯ বাংলাদেশি উদ্ধার Dec 15, 2025
img
চবি উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ Dec 15, 2025
img
পুলিশের বিশেষ অভিযানে যুবলীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার Dec 15, 2025
img
নেতানিয়াহুর ওপর ক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া বার্তা Dec 15, 2025
img
চট্টগ্রামে ঝুটের গুদামে আগুন Dec 15, 2025
img
অ্যাক্টিভিস্ট রাকিব আল হাসানের বাবা ডিবি হেফাজতে Dec 15, 2025
img
হাদির পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন, মঙ্গলবার সকালে জানা যাবে রিপোর্ট Dec 15, 2025
img
বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রাশিয়ান হাউসের Dec 15, 2025
img
নোবেল নিতে যাওয়ার সময় আহত হলেন মাচাদো Dec 15, 2025
img
‘স্পিরিট’-এ ২০০ ফাইটারের বিপরীতে প্রভাসের শক্তিশালী পারফরম্যান্স Dec 15, 2025
img
শীত বিলাসের জোর দাবি জানালেন অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ Dec 15, 2025
img
বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জিততে দেখতে চান শোয়েব আখতার Dec 15, 2025