ভারতের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়: গোলাম পরওয়ার

ভারতীয়দের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াত আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১২ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দিন মোল্লা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জিয়াউল হাসান, মো. আতাউর রহমান সরকার, জামাল উদ্দিন, মুহিবুল্লাহ, নাসির উদ্দিন প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের রহস্য রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই এ হত্যাকাণ্ডের বিচারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে সব দোষ জামায়াতের ওপর চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত এবং তাদের দেশীয় এজেন্টরা জড়িত ছিল—এমন প্রমাণ ভারতীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও লেখকদের লেখনিতে পাওয়া যায়। মূলত ১৪ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও ভারতীয় পরিকল্পনায় তা দুই দিন বিলম্বিত করা হয়। এই সময়েই শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, প্রকৌশলী, আইনবিদসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, যাদের হত্যা করা হয়েছিল তারা স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও ভারত ও তাদের এদেশীয় এজেন্টদের আদর্শের বিরোধী ছিলেন। নিজেদের আধিপত্য নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যৎ পথচলা নির্বিঘ্ন করতেই পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী নিধন চালানো হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বরং আওয়ামী লীগ সরকার তা গোপন করে রেখেছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সত্য উদঘাটনে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবকে নস্যাৎ করতেই জুলাই বিপ্লবের অন্যতম সিপাহসালার ওসমান হাদির ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হলেও সরকার তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জনগণের নিরাপত্তার কথা বলে বিদেশ থেকে প্রযুক্তি আমদানির কথা বলা হলেও অতীতে এসব প্রযুক্তি জনগণের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। 

ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক হতে হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। প্রভু–ভৃত্যের সম্পর্ক কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপও কাম্য নয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, বুদ্ধিজীবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের রাজনৈতিকভাবে বিভাজন করা উচিত নয়। যে আদর্শেরই হোন না কেন, সবাইকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে। তিনি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, যারা আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায়নি, তারাই এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের অপশক্তি। বিজয়ের পাঁচ দশক পার হলেও আজও বুদ্ধিজীবী হত্যার কুশীলবরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। জহির রায়হানের হত্যার রহস্যের জটও এখনো খোলেনি।

ইউটি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের হাইকমিশনাকে তলব Dec 15, 2025
img
মালদ্বীপ হাইকমিশনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত Dec 15, 2025
img
প্রণয় ভার্মাকে তলবের পর ঢাকার উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করে নয়াদিল্লির বিবৃতি Dec 15, 2025
img
আমিরাতে ৪১ বাংলাদেশি পেলেন সিআইপি স্বীকৃতি Dec 15, 2025
img
দিল্লিতে ভয়াবহ বায়ুদূষণ, ঘন ধোঁয়ায় ঢাকল শহর Dec 15, 2025
img
বুদ্ধিজীবী দিবসে ঢাবিতে ছাত্রদল নেতার ব্যতিক্রমী কর্মসূচি Dec 15, 2025
img
একজন আহত ব্যক্তি তার যন্ত্রনা যত সহজে ভুলে যায়, একজন অপমানিত ব্যক্তি তত সহজে অপমান ভোলে না: জর্জ লিললো Dec 15, 2025
img
সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেন ইশরাক Dec 15, 2025
img
অসহায়কে অবজ্ঞা করা উচিত নয়: অলিভার গোল্ডস্মিথ Dec 15, 2025
img
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য চীনের ২৫ লাখ ডলার অনুদান স্বাগত জানালো ইউএনএইচসিআর Dec 15, 2025
img
ভারতের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়: গোলাম পরওয়ার Dec 15, 2025
img
তাপমাত্রা নিয়ে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস Dec 15, 2025
img
ভারত থেকে এলো ৩০০ টন পেঁয়াজ, কেজিতে দাম কমলো ১৫ টাকা Dec 15, 2025
img
নিউজিল্যান্ড দলে ফিরলেন প্যাটেল ও ব্লান্ডেল Dec 15, 2025
img
জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় আলাদা কার্যালয় করছে বিএনপি Dec 15, 2025
img
সাংবাদিক আনিস আলমগীরের বিষয়ে কী জানাল ডিবি প্রধান? Dec 15, 2025
img
আনিস আলমগীর-শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের Dec 15, 2025
img
মেসিকে পাওয়া পুরো ভারতের জন্য স্মরণীয় এক মুহূর্ত: শচীন Dec 15, 2025
img
বিজয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ Dec 15, 2025
img
মুস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও হারল দুবাই Dec 15, 2025