আমরা আমাদের চুলের প্রাকৃতিক রং পছন্দ করি। বয়সের সঙ্গে আমাদের এই প্রাকৃতিক রং ধূসর হয়ে যেতে থাকে বা চুল পাকতে শুরু করে। অনেক সময় অল্প বয়সেও এই চুল পাকা সমস্যা দেখা দেয়।
অল্প বয়সে চুল পেকে গেলে আমাদের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। এটি কেবল চেহারাকে প্রভাবিত করে না, আমাদের আত্মবিশ্বাস হ্রাস করে এবং মানসিক অশান্তির সৃষ্টি করে। ২৫ বছর বয়সের আগে যদি আপনার চুল ধূসর হয়ে যায়, তবে একে অকালে চুল পাকা বলা যেতে পারে।
ভিটামিন-বি ১২ এর অভাব বা আয়রনের তীব্র ঘাটতির কারণে অকালে চুল পাকার লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অকালে চুল পাকার কারণ হতে পারে খাদ্যাভ্যাসে পর্যাপ্ত প্রোটিন, তামা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সমূহের অভাব।
অকালে চুল পাকা কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?
সঠিক বয়সের আগে চুল ধূসর হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে হলে স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। আপনার খাদ্যতালিকায় পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি, দই, তাজা ফল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে এই জাতীয় খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে চুলের অকাল বার্ধক্য রোধ হতে পারে।
ইতিমধ্যে ধূসর হয়ে যাওয়া চুল নিয়ে কী করা যেতে পারে?
আমলকী ও মেথি বীজের মিশ্রণে চুলের মাস্ক
আমলকি ও মেথির গুড়ো এবং পানি একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। চুলে মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন এবং সারারাত রেখে দিন। পরদিন সকালে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন-সি থাকে এবং মেথি বীজ চুলের জন্য উপকারী পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই দু’টি উপাদান একসঙ্গে চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে এবং চুলের অকাল ধূসর হওয়া রোধ করতে সক্ষম।
কাড়ি ও নারকেল তেল
নারকেল তেলে কয়েকটি কারি পাতা সিদ্ধ করুন। পাতাগুলি কালো না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ হয়ে গেলে মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হতে দিন। এটি আপনার চুলে মাসাজ করুন এবং সারারাত রেখে দিন। পরের দিন সকালে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। কারি পাতায় থাকা ভিটামিন-বি চুলের ফলিক্যালসে মেলামাইন পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে এবং ধূসর হওয়া প্রতিরোধ করে।
ব্ল্যাক-টি হেয়ার প্যাশন
এক গ্লাস পানি এবং ২ চা-চামচ কালো চা পাতা নিন। এক চামচ লবণ যোগ করুন। ফুটিয়ে পানি অর্ধেক করুন। মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হতে দিন। চুল ধুয়ে এই মিশ্রণটি চুলে প্রয়োগ করুন। বাজারে উপলব্ধ চুলের রঙ কিংবা কলপ ছাড়াই এটি চুল কালো করার একটি প্রাকৃতিক উপায়।
বাদামের তেল ও লেবুর রস
২:৩ অনুপাতে বাদাম তেল এবং লেবুর রস একসঙ্গে মেশান। মিশ্রণটি আপনার মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালো করে মাসাজ করুন। ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বাদামের তেলে থাকা ভিটামিন-ই চুলের শিকড়কে পুষ্টি যোগায় এবং অকাল ধূসরতা রোধ করতে পারে। লেবুর রস ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মেহেদি পাতা এবং কফির মিশ্রণ
মেহেদি পাতা ঐতিহ্যগতভাবে চুল রঙ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, সরাসরি গাছ থেকে মেহেদি পাতা সংগ্রহ করা জরুরি। কারণ বাজারে উপলব্ধ মেহেদিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক এবং কৃত্রিম রঙ থাকে।
ধূসর চুল থেকে প্রাকৃতিকভাবে মুক্তি পেতে মেহেদি ও কফি ব্যবহার করতে হলে ২-৩ কাপ পানিতে কিছু কফি সিদ্ধ করতে হবে। মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হতে দিন এবং পেস্ট তৈরি করতে মেহেদী গুঁড়ো যুক্ত করুন। তারপর কয়েক ঘণ্টা মিশ্রণটি এভাবে রেখে দিন। এবার পেস্টে ১ চা চামচ আমলকী / বাদাম / নারকেল / সরিষার তেল যোগ করুন এবং এটি আপনার চুলে প্রয়োগ করুন। এটি এক ঘণ্টা রেখে দেয়ার পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
টাইমস/এনজে/জিএস