দেশের জন্য সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে চাই : জাইমা রহমান

একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে দেশের জন্য সর্বস্ব দিয়ে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই কথা জানান। তার সেই পোস্ট বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা হয়।

পোস্টে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে জাইমা রহমান বলেন,‘ দাদুকে নিয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিগুলোর একটি হলো, পরিবারকে আগলে রাখা একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি কতটা মমতাময়ী ছিলেন! আমার বয়স তখন এগারো।

আমাদের স্কুলের ফুটবল টিম একটা টুর্নামেন্ট জিতেছিল, আর আমি মেডেল পেয়েছিলাম। আম্মু আমাকে সরাসরি দাদুর অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন, আমি যেন নিজেই দাদুকে আমার বিজয়ের গল্পটা বলতে পারি; তাঁকে আমার বিজয়ের মেডেলটা দেখাতে পারি। আমি খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে গোলকিপার হিসেবে কী-কী করেছি, সেটা বলছিলাম; আর স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম, দাদু প্রচণ্ড মনোযোগ নিয়ে আমাকে শুনছেন। তিনি এতটাই গর্বিত হয়েছিলেন যে, পরে সেই গল্পটা তিনি অন্যদের কাছেও বলতেন।

‘আমি সব সময়ই জানতাম, আমার দাদুর কাঁধে একটা দেশের দায়িত্ব। তবুও আমার স্মৃতিতে দাদু হলেন পরিবারকে আগলে রাখা একজন মমতাময়ী অভিভাবক। লাখো মানুষের কাছে তিনি ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আমার আর আমার কাজিনদের কাছে তিনি ছিলেন ‘দাদু’।

আমাদের ‘দাদু’। তিনি সব সময় আমাদের খেয়াল রাখতেন, আমাদের জন্য সময় বের করতেন, আর যেসব মুহূর্ত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেগুলোতে আমাদের সাহস দিতেন, উজ্জীবিত করতেন।

এই ছোট-ছোট মুহূর্তগুলো থেকেই আমি নেতৃত্বের প্রথম শিক্ষা পাই। সেটি হলো, নম্রতা, আন্তরিকতা আর মন দিয়ে শোনার মানসিকতা।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বাইরে কাটানো সতেরোটা বছর আমার জীবন অনেকভাবে বদলে দিয়েছে।

কিন্তু আমি কখনোই আমার শিকড় ভুলে যাইনি। কারণ, আমাদের সত্তার যে ভিত্তি, আমাদের যে সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ; সেটিই আমাদেরকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে, পরিচয় বহন করে। প্রবাসে থাকা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের অনেক বাংলাদেশির মতো আমিও নিজ দেশের বাইরে, ভিন্ন দেশে অনেকগুলো বছর কাটিয়েছি। লন্ডনের দিনগুলো আমাকে বাস্তববাদী করেছে, একটা বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। যদিও আমার হৃদয়-মন সব সময় বাংলাদেশেই ছিল।’

ব্যারিস্টার জাইমা বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমাকে শৃঙ্খলা ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান শিখিয়েছে। তবে মানুষের সঙ্গে কাজ করা আমাকে শিখিয়েছে আরও অনেক বেশি; শিখিয়েছে দায়িত্বশীল হতে, বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়াতে। আইন পেশায় কাজ করার সময় কাছ থেকে দেখা মানুষগুলোর গল্প, আর সেই গল্পগুলোর যৌক্তিক এবং আইনগত সমাধান খোঁজার দায়িত্ব আমাকে আলোড়িত করে। প্রত্যেক ক্লায়েন্ট, প্রতিটি মামলা, প্রতিটি মানুষের সমস্যা, কারো না কারো জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। যারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, অবহেলার শিকার হয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সেই বিশ্বাস দিতে হয় যে, তাদের বিষয়টি দেখা হচ্ছে, শোনা হচ্ছে, সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারো জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনে তার পাশে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা যে শিক্ষাটা দেয়, সেটা কোনো ক্লাসরুম দিতে পারে না। এই প্রতিটা ধাপ আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে, মানুষ হিসেবে কেমন হতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার ‘দাদা’কে কখনো দেখিনি। কিন্তু তাঁর সততা আর দেশপ্রেমের কথা সব সময় শুনে এসেছি। ‘দাদু’ আর ‘আব্বু’ সেই আদর্শটাই বয়ে নিয়ে চলেছেন। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সময় এবং ৫ আগস্টের আগে-পরের সময়টাতে আমি যতটুকু পেরেছি, নেপথ্যে থেকে সাধ্যমতো ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। অধিকাংশ সময় বলেছি কম, বরং শুনেছি বেশি। ছোট-ছোট কাজের মাধ্যমে তাঁদের বোঝা একটু হালকা করার চেষ্টা করেছি।’’

দেশে ফেরা নিয়ে জাইমা রহমান বলেন, ‘‘অনেকগুলো বছর পর দেশে ফিরছি। দেশে ফেরা মানে আবেগ আর অনুভূতির এক অনন্য সংমিশ্রণ। দেশে ফিরে ইনশাআল্লাহ, আমি ‘দাদু’র পাশে থাকতে চাই। এই সময়টাতে আব্বুকে সর্বাত্মক সহায়তা করতে চাই। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে দেশের জন্য সর্বস্ব দিয়ে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে চাই। নিজের চোখে, নিজের অভিজ্ঞতায় প্রিয় বাংলাদেশকে নতুন করে জানতে চাই; মানুষের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চাই।

যেভাবে এগুনো দরকার, আমি চাই বাংলাদেশ আবারো সেভাবে সামনে এগিয়ে যাক, গর্জে উঠুক।’’

‘আমি জানি, আমার পরিবারকে ঘিরে দেশের জনগণের কৌতূহল রয়েছে, প্রত্যাশা রয়েছে। সেটি কখনো আশার, কখনো প্রশ্নের। সেই প্রত্যাশা পূরণের দায়ভারও রয়েছে। জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণের চাপ আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে অনুভব করি; পরিবারে, বন্ধুত্বে, সমাজে। সংক্ষেপে, আমার নিজের ভাষায়, এই হলো আমার গল্প। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটা নিজস্ব গল্প আছে। এই গল্পগুলোকে ধারণ করে, আমরা সবাই হয়তো একসঙ্গে বাকি পথটা হাঁটতে পারি।

টিকে/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গণমাধ্যমের ওপর হামলার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের মানববন্ধন Dec 23, 2025
img
অ্যাসাসিন্স আর্কে ফিরছে ‘চেইন'স ম্যান’ Dec 23, 2025
img
অর্ডার প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে ইসিকে সহযোগিতা করা সম্ভব নয় : আইজিপি Dec 23, 2025
img
‘কল অফ ডিউটি’ গেমের নির্মাতা ভিন্স জ্যাম্পেলা আর নেই Dec 23, 2025
জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায় উত্তর কোরিয়ার কঠোর হুঁশিয়ারি Dec 23, 2025
প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলায় গ্রেপ্তার ১৭ জন: ডিএমপি Dec 23, 2025
img
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আমেরিকার গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন : ট্রাম্প Dec 23, 2025
img
ডিসেম্বর মুডে জয়া আহসান Dec 23, 2025
img
শরিকদের জন্য আরও ৪ আসন ছাড়ল বিএনপি Dec 23, 2025
img
প্রার্থী হওয়ায় হত্যার হুমকি, নিরাপত্তার জন্য গানম্যান চান হিরো আলম Dec 23, 2025
img
শাহজালাল বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টা যাত্রী ছাড়া অন্য সবার প্রবেশ নিষেধ Dec 23, 2025
img
মৌলভীবাজারে আ. লীগের ৭ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Dec 23, 2025
img
জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান, মাদক সহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার Dec 23, 2025
img
২০২৫ সালে গুগলে সবচেয়ে বেশি সার্চকৃত ৫ বিষয়ের তালিকা প্রকাশ Dec 23, 2025
img
নিজ নামে ২ 'সর্ববৃহৎ ব্যাটলশিপ' নির্মাণ করছেন ট্রাম্প Dec 23, 2025
img
এআই প্রযুক্তির বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক টাইমস সাংবাদিকের মামলা Dec 23, 2025
img

বললেন বিজেপি নেতা সুনীল শর্মা

বাংলাদেশ-পাকিস্তান নিয়ে চুপ থাকবেন না মোদি, তাকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র ভয় পায় Dec 23, 2025
img
‘লাজুক’ স্বামীর ৫২০ পরকীয়া নিয়ে বই লিখেছেন স্ত্রী! Dec 23, 2025
img
অ্যাভেঞ্জার্স: ডুমসডে ট্রেলারে ফিরে এলো এমসিইউ-এর পরিচিত তারকা Dec 23, 2025
img
সমাজ কি আমায় মেনে নেবে? প্রশ্ন ইমনের Dec 23, 2025