তিনি বয়সে এগিয়ে চলেছেন, কিন্তু মননে একটুও পুরোনো হননি। বাংলা গানের জগতে যাঁকে আজও চেনা যায় প্রাণখোলা হাসি আর বিন্দাস উপস্থিতিতে, সেই জোজো মুখোপাধ্যায় পা দিলেন জীবনের পঞ্চাশে। জন্মতারিখ নিয়ে নানা ভুল তথ্য ঘোরাফেরা করলেও বাস্তবটা আলাদা। এক জানুয়ারি নয়, জোজোর জন্মদিন তেইশে ডিসেম্বর। সেই দিনেই অর্ধশতাব্দীর মাইলফলক ছুঁয়ে ফেললেন টলিপাড়ার আদরের মিস জোজো।
ছোট বয়স থেকেই সুরের সঙ্গে বেড়ে ওঠা। মাত্র ছয় বছর বয়সে মঞ্চে গান গাওয়া শুরু। আঠারো বছর বয়সে জীবনের এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তখনই মিস থেকে মিসেস হয়ে গেলেও শ্রোতাদের মনে আজও তিনি রয়ে গিয়েছেন মিস জোজো নামেই। গানের পাশাপাশি অভিনয়েও তাঁকে দেখা গিয়েছে, তবে গায়িকা হিসেবেই তাঁর পরিচিতি সবচেয়ে উজ্জ্বল।
পঞ্চাশ ছুঁয়েও জোজো আগের মতোই স্পষ্টভাষী ও খোলামেলা। সা রে গা মা পা-র বিচারকের আসনে যেমন নির্ভীক মত প্রকাশ করেন, তেমনই নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কখনও লুকোছাপা করেন না। বছরখানেক আগে ছেলে আদিপ্তকে দত্তক নিয়েছেন তিনি। মেয়ে বাজো কর্মসূত্রে শহরের বাইরে থাকেন। বর্তমানে কলকাতায় ছেলেকে নিয়েই জোজোর সংসার।
স্বামীর সঙ্গে অবশ্য এক ছাদের তলায় থাকেন না তিনি। জোজোর স্বামী কিংশুক মুখোপাধ্যায়, যাঁকে গানের দুনিয়া বাবলু নামেই চেনে। প্রকৃতির টানে শহর ছেড়ে ডুয়ার্সে হোমস্টে চালান কিংশুক এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে থাকেন। লং ডিসট্যান্ট দাম্পত্যেই বিশ্বাসী জোজো। সময় পেলেই স্বামীর কাছে ছুটে যান তিনি।
চলতি বছরের শুরুতেই তাঁদের বিয়ের একত্রিশ বছর পূর্ণ হয়েছে। সেই উপলক্ষে নিজের দাম্পত্য নিয়ে অকপট হয়েছিলেন জোজো। তাঁর বিশ্বাস, আলাদা থাকাই তাঁদের সম্পর্ককে আরও পরিণত করেছে। স্বামীর দেওয়া স্বাধীনতাই তাঁকে নিজের শর্তে বাঁচতে শিখিয়েছে এই কথাও বারবার স্বীকার করেন তিনি।
প্রেমের গল্পটাও কম রঙিন নয়। এক টক শো-তে জোজো জানিয়েছিলেন, রবীন্দ্রসরোবর লেকে প্রেম করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন তাঁরা। পরদিনই পৌঁছে যান শ্বশুরবাড়িতে, আর এক সপ্তাহের মধ্যেই সেরে ফেলেন বিয়ে। ভালোবাসা, বিশ্বাস আর স্বাধীনতার ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আজও অটুট রয়েছে জোজো মুখোপাধ্যায়ের জীবনগান।
আরপি/এসএন