মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জাতিসংঘের বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে (কপ) দেশের পক্ষে উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি দেশ যে গুরুত্ব ও মনোযোগ পায়, অন্য পর্যায়ের প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে তা পাওয়া যায় না। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের অবস্থান ও গুরুত্ব তুলে ধরতে কপে উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে তুলা উন্নয়ন বোর্ডে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন-২০২৫ (কপ-৩০)-এ অংশগ্রহণ পরবর্তী ডি-ব্রিফিং কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ একটি প্রাণবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ দেশ। যদিও দেশটি নানা সমস্যায় জর্জরিত, তবুও এর সমাধানের সক্ষমতা আমাদের হাতেই রয়েছে।
তিনি বলেন, সম্মিলিতভাবে আমরা যদি সমস্যাগুলোর সমাধানে উদ্যোগ নিতে পারি, তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সে দিকেই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে খামারিরা অনেক সময় বিদেশি জাতের প্রতি ঝুঁকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে দেশীয় জাত অনেক বেশি উপযোগী।
তিনি উল্লেখ করেন, বিদেশি জাতের পশুপালনে যে মাত্রার সেবা, পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন হয়, দেশীয় জাতের ক্ষেত্রে তা তুলনামূলকভাবে কম। তিনি আরও বলেন, শুধু উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে বিদেশি জাত আমদানি করা যাবে না। আমাদের দেশীয় জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য একটি দক্ষ এক্সপার্ট গ্রুপ গঠন জরুরি। তরুণদের একটি দল ইতোমধ্যে জলবায়ু ইস্যুতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, জিএমও (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম) থেকে সৃষ্ট সমস্যার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে; কারণ এর প্রভাব মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতেও রয়েছে। শুধু প্রযুক্তি নয়, মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকেও সমান গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কর্মশালায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবেরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকার সরকারি ও বেসরকারি এক্সপার্টাইজকে একত্রে নিয়ে কাজ করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, কপ ফান্ড না পেলেও দেশের স্বার্থে নিজস্ব উদ্যোগে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকার জলবায়ু খাতে নিজস্ব তহবিল থেকে ৩.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিচ্ছে বলে তিনি জানান। একই সঙ্গে তিনি ন্যাশনাল কনটেক্সট বিবেচনায় নিয়েই জলবায়ু সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
স্বাগত বক্তব্য করেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ সফিউল্লাহ, ব্রাজিলস্হ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম এনডিসি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম খান। বারসিকের পরিচালক ও প্রাণবৈচিত্র ও প্রতিবেশ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ এবং ইউথনেট গ্লোবালের এক্সিকিউটিভ কো-অর্ডিনেটর সোহানুর রহমান।
প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) গাজী মো. ওয়ালি-উল-হক, পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউল হক। উন্মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার।
সঞ্চালনায় ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্হা এবং সহযোগিতা অনুবিভাগের যুগ্মসচিব শাহীনা ফেরদৌসী।
কর্মশালায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, এনজিও প্রতিনিধি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এবি/টিকে