বর্তমানে স্মার্টফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। গান শোনা, ভিডিও দেখা কিংবা আগে কম্পিউটার ব্যবহার করে যেসব কাজ করতে হতো তার অনেক কিছুই এখন পকেটের ছোট এই ডিভাইসটির দ্বারা করা যাচ্ছে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত কতক্ষণ আর কতবার স্মার্টফোনটি ব্যবহার করছেন?
আমাদের জীবন এখন স্মার্টফোন বান্ধব হয়ে উঠেছে, আর আমাদের ফোনগুলি আমাদের জন্য পরিণত হয়েছে এক প্রকারের নেশায়। ঘুম থেকে উঠার পর মুহূর্ত থেকে পরের দিনের জন্য অ্যালার্ম সেট করার সময় পর্যন্ত স্মার্টফোন আমাদের একটি অস্বাস্থ্যকর আবেগে রূপান্তরিত হয়েছে।
উদ্বেগজনক সংবাদ হলো বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন যে, স্মার্টফোনের আসক্তি মাদকের আসক্তির মতই মারাত্মকও হতে পারে। ফোনের প্রতি আমাদের ক্রমবর্ধমান এই আবেগ নানান সমস্যার কারণ হতে পারে। অ্যাডিকটিভ বিহেভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, স্মার্টফোন আসক্তি বেশিরভাগ কুখ্যাত ড্রাগ ও মাদকদ্রব্যের মতো মানুষের মস্তিষ্কে একই প্রভাব ফেলে।
গবেষণার জন্য, হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক জার্মান অধ্যাপকরা ৪৮ জনের মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যানের তুলনা করেছেন, যার মধ্যে ২২ জন ফোনে আসক্ত ছিলেন, বাকিরা ছিলেন না।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, যারা স্মার্টফোনের আসক্তিতে ভুগছেন তাদের মস্তিষ্কের আকার ও ঘনত্বের মধ্যে শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে (ধূসর পদার্থ যা বক্তৃতা, দর্শন, জ্ঞান, আবেগের পাশাপাশি আত্ম-নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী)। মস্তিষ্কের গঠনের এসব পরিবর্তন মাদকাসক্তিতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে একইভাবে দেখা গেছে। প্রকৃতপক্ষে, অতীতে করা আরেকটি সমীক্ষায় ফোন ও ড্রাগের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
আপনি কি জানেন যে আপনি যখন আপনার ফোনের কোনো বিজ্ঞপ্তি পরীক্ষা করেন তখন কেন আপনি এতো খুশি হন? বা আপনি যখন ইন্টারনেট ব্রাউজ করছেন তখন কি খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? এর কারণ ফোন ব্রাউজিংয়ের ফলে ড্রাগের অপব্যবহারের মতো এক ধরণের নেশার সৃষ্টি হয়।
এছাড়াও এটি অস্থায়ীভাবে দেহে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটায়, যা একটি সুখানুভূতি সৃষ্টি করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকেও উদ্দীপিত করে। স্মার্টফোন ক্রমেই আপনাকে নিজের মতো করে জীবন উপভোগ করতে দিচ্ছে না এবং আপনার মস্তিষ্কের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলেছে।
অস্বাস্থ্যকর স্মার্টফোন আসক্তির আসল বিপদ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ভারতের কোকিলাবেন ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কনসালট্যান্ট ডা. শৈনাক আজিক্যা বলেছেন, ‘স্মার্টফোনের আসক্তি গ্যাজেট বা ভার্চুয়াল স্ক্রিনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এটি একটি অস্বাস্থ্যকর ব্যাধি, যা আমাদের ধারণার থেকেও বেশি বিপজ্জনক হতে পারে। অতিরিক্ত ব্যবহার উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়, মেজাজ খিটখিটে করে, নিদ্রাহীনতা সৃষ্টিসহ স্বাভাবিক সম্পর্ক পরিচালনার ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার খাদ্যতালিকায় পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। এই আসক্তির ফলে কাজ কিংবা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে।’
ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা স্বাস্থ্যকর নয়। এটি বৈশ্বিক স্থূলত্বের মহামারীতেও অবদান রাখছে এবং কিছু উপায়ে আপনার ওজন হ্রাসের লক্ষ্যকেও প্রভাবিত করছে। বলা বাহুল্য, ফোন ব্যবহারের ইতিবাচক দিক যতটা নেতিবাচক দিকও ততটা রয়েছে।
সুতরাং স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করুন। অপ্রয়োজনে কিংবা শুধু সময় কাটাতে স্মার্টফেন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। দেহ ও মনের জন্য উপকারী এমন সব অ্যাপস ব্যবহার করুন। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
টাইমস/এনজে/জিএস