দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে সাড়ে তিন কোটি মানুষ

চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে দেশে নতুন করে দরিদ্রের হার ২২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। আগে যা সরকারি হিসেবে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। ফলে দেশে মোট দরিদ্রের হার হয়েছে ৪৩ শতাংশ। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক যৌথ জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার এক ওয়েব সেমিনারে ‘কোভিড-১৯ এর সময় জীবিকা, ক্ষতি ও সহায়তা’ শীর্ষক ঐ গবেষণা প্রতিবেদনে এসব ফলাফল তুলে ধরা হয়। অতি দরিদ্র, দরিদ্র, ঝুঁকিপূর্ণ ও ‘দারিদ্র্য সীমার বাইরে’ জনগোষ্ঠী এই চার শ্রেণীর ৫ হাজার ৪৭১ জন মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৫১ শতাংশ মানুষ গ্রামের। এতে গত ফেব্রুয়ারির সাথে এপ্রিলের তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান, পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (জেষ্ঠ্য সচিব) অধ্যাপক শামসুল আলম, বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন প্রমুখ।

গবেষণা প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদে ছুটি ও লকডাউনের প্রভাবে গ্রামের মানুষের ৬২ শতাংশ এবং শহরের মানুষের আয়-রোজগার ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। কাজ হারিয়ে নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ। আগে থেকেই দরিদ্র ছিল ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। সবমিলিয়ে ৭ কোটি দরিদ্র মানুষ করোনার কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তাদের খাদ্যসহায়তা এবং অতিপ্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে প্রতিমাসে ১০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পেশা ভিত্তিক সর্বোচ্চ ৯৯ শতাংশ রোজগার কমেছে রেস্তোরাঁ কর্মীদের। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৮ শতাংশ রোজগার কমেছে ভাঙারি শ্রমিকদের। এরপর রিকশা চালকদের আয় কমেছে ৮৪ শতাংশ, দিনমজুর ও শিল্পী সমাজের আয় কমেছে ৮৩ শতাংশ, মালি ও কারখানা কর্মীদের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ।

এছাড়া দক্ষ শ্রমিকদের ৭৯ শতাংশ, কৃষি শ্রমিকদের ৭৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ৭৩ শতাংশ, দোকান/ সেলুন/ পার্লারের রোজগার কমেছে ৭২ শতাংশ। পোশাক কর্মীদের আয় কমেছে ৪৯ শতাংশ, কৃষকের ৪৪ শতাংশ, পিয়ন ও নিরাপত্তারক্ষীদের ৪৩ শতাংশ, অফিসের আনুষ্ঠানিক কর্মীদের কমেছে ৩৩ শতাংশ এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আয় কমেছে ২৭ শতাংশ। আয় কমে যাওয়ায় তাদের খাবার ব্যয় কমাতে বাধ্য হয়েছেন।

অতিদরিদ্র, দরিদ্র, ঝুঁকিপূর্ণ দরিদ্রসীমার বাইরে জনগোষ্ঠী এবং দরিদ্রসীমার বাইরের জনগোষ্ঠী এই চার শ্রেণির ৫ হাজার ৪৭১ জন মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৫১ শতাংশ মানুষ গ্রামের। এতে ফেব্রুয়ারির সঙ্গে এপ্রিলের তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

সেমিনারে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, করোনার কারণে মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তাদেরকে অবশ্যই সুরক্ষার আওতায় আনতে হবে।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করোনার কারণে জীবিকা নির্বাহ এবং পুনরায় কাজে ফিরে যেতে ৩ কোটি ৩০ লাখ দরিদ্র মানুষের জন্য প্রতিমাসে সহায়তা প্রয়োজন ৫ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। আর নতুন দরিদ্রে পরিণত হওয়া ৩ কোটি ৭ লাখ মানুষের জন্য প্রয়োজন ৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে ৭ কোটি দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করতে সরকারকে কমপক্ষে প্রতি মাসে ১০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা ব্যয় করা প্রয়োজন। এটি কমপক্ষে তিন মাস অব্যাহত রাখতে হবে।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইন্টারনেট ব্যবহারে এশিয়ায় বেশি পিছিয়ে বাংলাদেশের নারীরা May 18, 2024
img
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা নেই : খুরশিদ আলম May 18, 2024
img
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের May 18, 2024
img
দুই জেলায় বজ্রপাতে ৫ জনের মৃত্যু May 18, 2024
img
স্বাধীনতাবিরোধীরা সুযোগ পেলেই ছোবল মারতে চায় : রাষ্ট্রপতি May 18, 2024
img
সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে : কাদের May 18, 2024
img
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল ঝড়ে সাতজনের প্রাণহানি May 18, 2024
img
রাঙামাটিতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ইউপিডিএফ কর্মীসহ নিহত ২ May 18, 2024
img
সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু May 18, 2024
img
ঢাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, জনজীবনে স্বস্তি May 18, 2024