মাস্ক না ফেস শিল্ড, কোনটি বেশি নিরাপদ?

কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের গ্রাফ ক্রমেই উর্ধমুখী। এর মধ্যেই যেতে হচ্ছে বিভিন্ন অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাস্তা ও যানবাহনে সামাজিক দূরত্বের মাপকাঠি বজায় থাকছে না বললেই চলে। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানানো হচ্ছে- করোনাভাইরাসের মারণক্ষমতা একটুও কমেনি। কাজেই লকডাউন তোলার পর্যায়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অনেকেই মাস্কের উপর স্বচ্ছ প্লাস্টিকের মুখাবরণ বা ফেস শিল্ড পরছেন। গণপরিবহনে উঠলে এবার থেকে কি দুটোই কি পরতে হবে, না কি যে কোনো একটা পরলে হবে? কোনটা বেশি নিরাপত্তা দেবে? এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।

তারা বলছেন, ত্রিস্তরীয় ও ফিল্টার দেয়া কাপড়ের কাপড়ের মাস্ক ঠিকভাবে পরলে এবং মানুষের সঙ্গে ৩-৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে পারলে প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ সুরক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে অনেক রকম সমস্যাও থেকে যায়। কারণ, অনেকে মাস্ক ঠিকভাবে সামলাতে পারেন না। কেউ কথা বলার সময় চিবুকের কাছে নামিয়ে নেন, কেউ বা পরেন নাকের নীচে এবং তা প্রায়ই নাক থেকে সরে যায়।

কখনও আবার এত হালকা করে বাঁধেন যে চারপাশে প্রচুর ফাঁক থেকে যায়। অনেকে আবার বার বার মাস্কের বাইরের অংশে হাত দিয়ে সেই হাত নাকে-মুখে-চোখে লাগান। কেউ কেউ একটাই মাস্ক না ধুয়ে বা ডিজপোজেবল হলে না ফেলে, রোজ পরতে থাকেন। ফলে মাস্ক পরার উদ্দেশ্যই মাটি হয়ে যেতে বসেছে।

এদিকে আশপাশে এত উপসর্গহীন রোগী ঘুরে বেড়াচ্ছেন যে কখন কার থেকে সংক্রমণ এসে ঢুকল, তা টের পাওয়া যাচ্ছে না। তার উপর মাস্ক পরলে আবার আলাদা করে চশমা বা সানগ্লাসেও চোখ ঢাকতে হয়। সেখানে শিল্ডের কি আলাদা করে কোনও উপযোগীতা আছে?

সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর মতে, ‘‘শিল্ডের সুবিধা হল, এতে কপাল থেকে চিবুক ছাপিয়ে ঢাকা থাকে। ফলে চোখে যেমন আলাদা করে কিছু পরতে হয় না, কথা বলারও সুবিধা হয়। ঠোঁট ও মুখের সঠিক অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়। চোখে-মুখে-নাকে হাত দেয়া যায় না, ফলে সে বাবদ সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়।’’

যাদের মাস্ক পরলে দমবন্ধ লাগে এই যুক্তিতে কষ্ট করে মাস্ক পরতে বাধ্য হন, ফেস শিল্ডে তাদের জন্য সুবিধা। তাছাড়া এটি জীবাণুমুক্ত করা সহজ। সাবান-জলে ধুয়ে নিলে বা স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে নিলে তা পরিষ্কার হয়ে যায়।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, শিল্ড পরলে মাত্র দেড় ফুট দূরে দাঁড়িয়েও যদি কেউ হাঁচেন, কাশেন, জোরে কথা বলেন বা হাসেন, ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো বিপদ হয় না। তাহলে কি শিল্ডই ভালো?

ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পান্ডার মতে, ‘‘বিষয়টা অত সরল নয়। শিল্ডের কিছু অসুবিধাও আছে। প্রথমত একটু ভারী। তার উপর দু’পাশে কিছুটা করে ফাঁকা জায়গা আছে বলে ঠিক পিছনে বা পাশে আপনার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে কেউ হাঁচলে, কাশলে, জোরে কথা বললে বা হাসলে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।’’

কাজেই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে কোনটা পরতে হবে। কেউ যদি ত্রিস্তরীয় মাস্ক ভালো করে টেনে বেঁধে, নিয়ম মেনে পরেন এবং আশপাশের মানুষের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন; তাহলে মাস্কই পরুন।

শিল্ড পরতে হবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, রাস্তায় বেশি লোকসমক্ষে আসা পুলিশকর্মী ও হাসপাতাল কর্মীদের। নাক-কান-গলা-চোখ বা দাঁতের চিকিৎসকদের দুটোই পরা দরকার বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। দুটো পরলে কি তা হলে বেশি নিরাপত্তা পাওয়া যাবে?

চিকিৎসকদের মতে, আমাদের দেশে রাস্তাঘাট ও যানবাহনের যা অবস্থা, তাতে দুটো পরে যদি সামলাতে পারেন, তাহলে তা পরতে পারেন।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: