উদ্যোক্তার আড়ালে অন্ধকার জগত, অল্পদিনেই কোটিপতি তূর্ণা!

রাহাত খানম তূর্ণা সবসময় স্বপ্ন দেখতেন উদ্যোক্তা হবেন। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করেই তিনি ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু করেন প্রোডাকশনের ব্যবসা। তবে তূর্ণা যেকোনো উপায়ে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। এক্ষেত্রে কিছু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তার কনফিডেন্সকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই তূর্ণার কার্যক্রম অস্বাভাবিক ছিল। সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ পরিচিত ছিল তূর্ণা। সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে টকশোতেও বেশকয়েকবার অংশ নিয়েছেন। সখ্যতা ছিল সব মহলে। ছাত্রনেতা ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ এবং অনেক সাংসদও ছিল তার এই সখ্যতার তালিকায়। নিজের ফেসবুকে সদ্য সাবেক ছাত্রলীগের দুই সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন ও গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে ছবিও শেয়ার করেছেন তিনি। এসব ছবি দেখিয়ে তিনি উপরে উঠার সিঁড়ি খুঁজে পান। উচ্চাকাংখার কারণে তিনি অন্ধকার জগতে পা বাড়ান। অল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তূর্ণা জড়িয়ে পড়েন প্রতারণায়। এভাবে অল্পদিনেই তার একাউন্টে অন্ত:ত ৫ কোটি টাকা যোগ হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তূর্ণার। নাইজেরিয়ানদের সঙ্গে ধরা খেয়ে এখন তিনি কারাগারে আছেন।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ছাত্রী রাহাত আরা খানম তূর্ণা ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন তার নিজের গড়া প্রোডাকশন ফ্যাক্টরিতে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। আর দুই-তিন বছর পরই সেটিকে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দাঁড় করানো স্বপ্ন ছিল তার। সে হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রী তো বটেই, অনেক ছাত্রও তাকে আইডল ভাবতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেই আইডল খ্যাতির চূড়ান্ত স্বীকৃতির পাওয়ার আগেই বাধ সাধল তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা। জড়িয়ে গেলেন বিদেশি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে। স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার। তবে তূর্ণা কোন স্বপ্নই পূরণ হয়নি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই বছর আগে ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে আসেন ওই ১১ নাইজেরিয়ান। এরপর তারা প্রতারণার জন্য নিয়োগ করেন রাহাত আরা খানম ওরফে তূর্ণাকে। পরবর্তীতে তূর্ণা নিজেই এই ব্যবসায় পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। তথ্যমতে, ফেসবুকে প্রতারণার মাধ্যমে সারাদেশ থেকে ৫/৬ কোটি টাকা ঢুকেছে তূর্ণা অ্যাকাউন্টে। মূলত প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এই অভিযোগেই মঙ্গলবার রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে ১১ নাইজেরিয়ানসহ গ্রেপ্তার হন ওই ছাত্রী। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মঈনুল ইসলাম তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

তূর্ণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১১-২০১২ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর আগে ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএএফ শাহীন কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। বাবা বিমান বাহিনীতে কাজ করার সুবাধে বেড়ে উঠেন চট্টগ্রামে। পরে তিনি অবসর গেলে সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। তূর্ণা ২০১১-২০১২ সেশনে ভর্তি হওয়ার পর স্নাতক শেষ করে ২০১৫ সালে আর ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এরপর তিনি প্রাইভেট একটি আইটি ফার্মে জয়েন করেন। বছর খানেক পর ২০১৮ সালের শেষের দিকে তিনি ছোট্ট পরিসরে কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে প্রোডাকশন ফ্যাক্টরি চালু করেন। এর মধ্যেই তিনি জড়িয়ে যান প্রতারক চক্রের সঙ্গে।

সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল হায়দার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ফেসবুকে বন্ধুত্বের নামে অনেক লোকের কাছ থেকে দামি উপহারের লোভ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এদের মধ্যে রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন (২৭) নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। মূলত প্রতারণার শেষ ধাপে কাজ করতেন তূর্ণা। চক্রটি প্রথমে বিপরীত লিঙ্গের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুত্ব করতেন। বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে একটি ম্যাসেঞ্জার আইডি থেকে পার্সেল গিফট করার প্রস্তাব দেওয়া হত। পরে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমেই এই পার্সেল বুক করার এয়ারলাইন্স বুকিং ডকুমেন্টও পাঠাত প্রতারকরা। এসব গিফট বক্সে বহুমূল্য সামগ্রী রয়েছে, এমনকি কখনো কখনো উপহারের বক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলেও ভুক্তভোগীকে জানানো হয়। তারা ভুক্তভোগীকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাস্টম গুদাম থেকে সেগুলো রিসিভ করতে বলেন। এরপরের কাজটিই করেন তূর্ণা। তিনি নিজেকে কাস্টমস কমিশনার হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের পার্সেল গ্রহণের শুল্ক পরিশোধের কথা বলতেন। টাকা না দিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টির ভয়ও দেখাতেন ঢাবির এই প্রাক্তন ছাত্রী। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অল্পদিনেই কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন তূর্ণা।

 

টাইমস/জেকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো হবে: উপ-প্রেস সচিব Jul 12, 2025
img
টলিউডে পুজার নতুন শুরু, সঙ্গী দুলকার Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডে হত্যার ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 12, 2025
img
ধাড়াক ২ ট্রেলারে নজর কাড়লেন সিদ্ধান্ত ও তৃপ্তি Jul 12, 2025
img
'জবাবদিহিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি', সায়মা ওয়াজেদকে বাধ্যতামূলক ছুটি নিয়ে প্রেস সচিব Jul 12, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার আভাস Jul 12, 2025
img
‘বাহুবলী ৩’ কি আসবে? দশ বছর পরেও প্রশ্ন অনড় Jul 12, 2025
img
‘সরকার বরাবরের মতোই নীরব’, মিটফোর্ডের ঘটনায় বাঁধন Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডের ঘটনায় আরও একজনসহ মোট গ্রেফতার ৫ Jul 12, 2025
img
কেবল পর্দার সামনে নয়, ক্যামেরার পেছনেও আসছেন এই অভিনেতারা Jul 12, 2025
তোমরা তো ১৩ মাসের নেতা; মুখ খুললেন সাংবাদিক নেতারা! Jul 12, 2025
img
'তারেক রহমানকে নিয়ে রাজপথে যে অশ্লীল অশ্রাব্য স্লোগান দেয়া হচ্ছে তার পরিণতি ভালো হবে না' Jul 12, 2025
img
নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতায় আসমান জমিন ফারাক: রিফাত রশিদ Jul 12, 2025
img
শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিলেও ফিনিশিংয়ে ভরসা পাচ্ছেন না কোচ Jul 12, 2025
img
কুবি শিক্ষার্থীদের ৩টি বাস উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ Jul 12, 2025
img
ফেনীর বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম Jul 12, 2025
img
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের ‘শান্তির তত্ত্ব’ ভেস্তে গেছে: ইরান Jul 12, 2025
img
আবারও একসঙ্গে রাজ–মন্দিরা, আসছে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ Jul 12, 2025
img
জোতাকে সম্মান জানিয়ে চিরতরে অবসরে লিভারপুলের ২০ নম্বর জার্সি Jul 12, 2025
img
পাশবিক এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে: আসিফ নজরুল Jul 12, 2025