হাঙ্গেরিতে ‘সরকারি হস্তক্ষেপের’ প্রতিবাদে ৭০ সাংবাদিকের পদত্যাগ

সাংবাদিকতায় সরকারি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে হাঙ্গেরির প্রধান ও জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদ সংস্থা ইনডেক্স.এইচইউ (https://index.hu/english/) থেকে সম্পাদকসহ ৭০ জনের বেশি সাংবাদিক পদত্যাগ করেছেন। দেশটির সরকার এ সংবাদ মাধ্যমটিকে ধ্বংস করতে চায় এমন অভিযোগ তুলে তারা পদত্যাগ করেছেন। শুক্রবার সাংবাদিকরা গণমাধ্যমটি থেকে পদত্যাগ করেন।

এর আগে মঙ্গলবার বরখাস্ত করা হয় ইনডেক্সের প্রধান সম্পাদক এসজাবোলসএস দুলকে। সম্পাদকীয় কাজে রাষ্ট্রনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ করায় তাকে বরখাস্ত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংবাদকর্মীরা এটাকে সুস্পষ্ট হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে জানিয়েছে, এর মধ্য দিয়ে সরকার এই সাইটটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়।

পদত্যাগী সংবাদকর্মীরা এক চিঠিতে জানিয়েছে, সম্পাদকীয় পর্ষদ মনে করছে যে, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সংবাদপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার কোন পরিবেশই আর রাখা হয়নি এবং তাদেরকে চাকরিচ্যূত করবার সব ব্যবস্থাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এদিকে ইনডেক্সের সংবাদকর্মীদের প্রতি একাত্মতা ও সংহতি জানিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানী বুদাপেস্টে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী কয়েকশ মানুষ।

ইনডেক্সের উপ সম্পাদক ভেরোনিকা মাঙ্ক। তিনি ১৮ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, সীমার সবটাই অতিক্রম করেছে কর্তৃপক্ষ।

মাঙ্ক আরও বলেন, গেল কয়েকদিনের মিটিংগুলোতে দুলকে কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বোদোলিকে অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তাতে তিনি কোন গা করেননি। বরং বলার চেষ্টা করেছেন, এটি দুলের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তারপরও আমি মনে করি এটি প্রকৃত কোন কারণ নয়। এর পেছনে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে।

এ বছরের গোড়ার দিকে সরকারসমর্থিত এক ব্যবসায়ী ইনডেক্স হোল্ডিং কোম্পানির একটা বড় শেয়ার কিনে নেন।
বরখাস্ত হওয়ার পর বুধবার বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান সম্পাদক দুল বলেন, “ইনডেক্স একটি শক্তিশালী দুর্গ। তাই এটিকে ওরা ধ্বংস করতে চায়।”

সংবাদ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহি লাসজেলো বোদোলাই দাবি করেছেন, ইনডেক্সের সম্পাদকীয় কাজে বাইরে থেকে কোন প্রকার হস্তক্ষেপের অবকাশ নেই।

পর্তুগাল সফরে থাকা হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেতেএর এসজিজার্তো শুক্রবার বলেছেন, সরকারের হস্তক্ষেপের কারণেই ইনডেক্সে এমন অসন্তোষ ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা “অসত্য”, এবং এর কোন ভিত্তি নেই।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স এর মূল্যায়ণে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সবথেকে খারাপ অবস্থায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরির অবস্থান দ্বিতীয়। আর সেই পরিস্থিতিতে ইনডেক্সকে মনে করা হতো সবশেষ স্বাধীন একটি সংবাদপ্রতিষ্ঠান।

কট্টর ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী ভিকতর অরব্যানের গেল এক দশকের শাসনকালে দেশটির গণমাধ্যমের স্বাধীণতা ধীরেই সংকুচিত হয়ে আসছে। ইতোমধ্যেই অনেক সংবাদ প্রতিষ্ঠান কিনে নিয়েছেন সরকারসমর্থিত ব্যবসায়ীরা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কিংবা বন্ধ হয়ে গেছে অনেক সংবাদ প্রতিষ্ঠান। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ