মেজর সিনহার সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কোথায়?

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খান। যা বর্তমানে দেশের আলোচিত একটি ঘটনা। ঘটনার আগে থেকেই কক্সবাজারে ডকুমেন্টারি তৈরির জন্য নিহত সিনহা রাশেদের সাথে সেখানে অবস্থান করছিলেন তিন শিক্ষার্থী।

তারা হলেন- শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং তাহসিন রিফাত নূর। তারা তিনজন বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী। সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলায়। ঢাকার মধুবাগ এলাকায় খালার বাসায় বসবাস করতেন তিনি। অন্যদিকে শিপ্রা দেবনাথের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায়। তিনি ঢাকার রামপুরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

এদের মধ্যে তাহসিন রিফাত নূরকে তাদের অভিভাবকের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি দুইজন- শিপ্রা দেবনাথ এবং সাহেদুল ইসলাম সিফাত এখন কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন। তাদের মুক্তির দাবিতে সহপাঠিরা নানা কর্মসূচী পালন করছেন।

এর মধ্যে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে দুটি মামলা এবং শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। পুলিশের গুলিতে যখন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হন তখন সেখানে ছিলেন সাহেদুল ইসলাম সিফাত। সিফাতের বিরুদ্ধে একটি মামলা হচ্ছে, সরকারি কাজে বাধা দেয়া ও হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করার জন্য তাক করা।

মামলার অভিযোগে পুলিশ উল্লেখ করেছে, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের সাথে যোগসাজশে সিফাত এ কাজ করেছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা আরেকটি মামলা মাদকদ্রব্য আইনে। সে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবৈধ মাদক জাতীয় ইয়াবা ট্যাবলেট এবং গাঁজা যানবাহনে নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধ।

অন্যদিকে শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি বিদেশী মদ, দেশীয় চোলাই মদ ও গাঁজা নিজ হেফাজতে রেখেছেন। পুলিশের ভাষ্য মতে, আত্মরক্ষার জন্য মেজর রাশেদ খানকে গুলি করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্টে তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। এরপর সেটি খুঁজতে পুলিশ রিসোর্টে যায়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সে রিসোর্টে গিয়ে একটি কক্ষে শিপ্রা দেবনাথ এবং আরেকটি কক্ষে তাহসিন রিফাত নূরকে পাওয়া যায়। এজাহারে পুলিশ উল্লেখ করেছে, শিপ্রা দেবনাথের কক্ষ তল্লাশি করে সেখানে বিদেশি মদ, দেশি চোলাই মদ এবং গাঁজা পাওয়া যায়।

শিপ্রা দেবনাথের মা পূর্ণিমা দেবনাথ জানান, গ্রেপ্তারের পর থেকে মেয়ের সাথে তাদের সরাসরি যোগাযোগ হয়নি। কক্সবাজারে অবস্থানরত তাদের পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে সেখানে একজন আইনজীবী ঠিক করা হয়েছে।

ভারতে অবস্থান করা শিপ্রা দেবনাথের ভাই প্রান্ত দেবনাথ টেলিফোনে জানান, বছর খানেক আগে কোন এক বন্ধুর মাধ্যমে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সাথে পরিচয় হয় শিপ্রা দেবনাথের। দুজনেরই আগ্রহের ক্ষেত্র ছিল ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ডকুমেন্টারি তৈরি করা।

অন্যদিকে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের খালু মাসুম বিল্লাহ বলেন, গ্রেপ্তারের পরে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে সিফাতের মানসিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন তার খালু। জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের পর একবার টেলিফোনে কথা বলা সম্ভব হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তার খালু মাসুম বিল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, সিফাতের সামনেই গুলির ঘটনা ঘটেছে। এজন্য সে প্রচণ্ড ট্রমার মধ্যে আছে।

কক্সবাজারে শিপ্রা দেবনাথ এবং সাহেদুল ইসলাম সিফাত উভয়ের জন্য একজন আইনজীবী ঠিক করা হয়েছে। আইনজীবী আবুল কালাম আজাদের অফিস থেকে জানানো হয়েছে উভয়ের জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

 

টাইমস/এইচইউ

 

Share this news on: