যেসব ব্যক্তিরা ওজন কমাতে চেষ্টা করছে তাদের জন্য গ্রিন টি এবং ব্ল্যাক কফি খুবই চমৎকার দুটি পানীয়। এ পানীয় দুটি চা ও কফির স্বাস্থ্যকর বিকল্পসরূপ। এই পানীয় দু’টিতে কম মাত্রায় ক্যালোরি এবং বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে।
অনেক গবেষণায় দেখা যায় যে, এই পানীয়সমূহ আপনার বিপাকীয় ক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং মেদ বা চর্বি ক্ষয়ের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে। পাশাপাশি এই উষ্ণ পানীয়গুলোতে আরও কিছু উপাদান থাকে যেগুলো সুস্বাস্থ্যের চিত্র তুলে ধরে।
এই নিবন্ধে আমরা ওজন কমানোর জন্য কোন পানীয়টি বেশি কার্যকর সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।
ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি
গ্রিন-টিতে ক্যাফেইন ও ক্যাটচিন নামক এক ধরনের ফ্ল্যাভিনয়েড পদার্থ থাকে। প্রকৃতপক্ষে, ক্যাটচিন হল এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গবেষণায় দেখা যায়, এই পদার্থগুলো বিপাকীয় গতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ক্যাটচিন কার্যকরভাবে শরীরের বাড়তি মেদ/চর্বিকে ভাঙতে সাহায্য করে।
২০১০ সালে একটি ছোট সমীক্ষা চালানো হয়েছিল যেখানে উঠে আসে- যেসকল ব্যক্তি মেদ ঝরাতে এবং ওজন সঠিক রাখতে চেষ্টা করছেন তাদের উপর প্রকৃতপক্ষে গ্রিন টি সাপ্লিমেন্টের ভালো প্রভাব রয়েছে।
গ্রিন টি গ্রহণ নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপের বেশি গ্রহণ করা উচিৎ নয়। এটি সত্য যে গ্রিন টি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু এর মধ্যে কিছু পরিমাণে ক্যাফেইন রয়েছে। তাই একদিনে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ ঘুমের সমস্যা ঘটাতে পারে এবং সেই সাথে হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
গ্রিন টি’র অন্যান্য উপকারিতা
যেসকল ব্যক্তি ওজন কমানোর চেষ্টা করছে তাদের ছাড়াও কোন ব্যক্তি যদি সুস্থ থাকার চেষ্টা করে তার জন্যও গ্রিন টি উপকারী। গ্রিন ট’তে ভিটামিন বি, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফ্লোভিনয়েড রয়েছে যেগুলো কোলেস্টেরোল কমানো, হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বাড়ানো, অ্যালঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমানো এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহ অনেক ধরণের শারীরিক উন্নতি সাধনের সাথে সম্পৃক্ত।
ওজন কমানোর জন্য ব্ল্যাক কফি
কফি হল আরেকটি জনপ্রিয় পানীয় যেটি বেশির ভাগ ব্যক্তিই ওজন কমানোর জন্য পছন্দ করে থাকেন। গ্রিন টি’র মতো কফিতেও কিছু চমকপ্রদ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, যার মধ্যে আছে সতর্কতা বৃদ্ধি এবং টাইপ-২ ডাইবেটিসের ঝুঁকি কমানো উল্লেখযোগ্য।
ব্ল্যাক কফি হল সাধারণত কফির একটি স্বাস্থ্যকর সংস্করণ যেখানে ক্রিম, চিনি বা দুধ মেশানো হয় না। ওজন কমাতে চেষ্টারত ব্যক্তিরা এটি বেশি পছন্দ করেন। তবে মাত্রাতিরিক্ত কফি গ্রহণের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে।
ব্ল্যাক কফিতে ক্যাফেইন থাকে যেটি আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে বৃদ্ধি করে এবং শরীরে শক্তির মাত্রাকে গতিশীল করে। উচ্চ বিপাক প্রক্রিয়া ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে এবং আপনাকে অনবরত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত রাখে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, কফি আপনার বিপাকীয় মাত্রাকে ৩ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে থাকে।
কফির অন্যান্য উপকারিতা
ব্ল্যাক কফি পুষ্টিগুণ এবং এন্টিঅক্সিডেন্টসে পরিপূর্ণ। এতে ভিটামিন বি টু, বি থ্রি, বি ফাইভ, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। প্রতিদিন ব্ল্যাক কফি গ্রহণ কাজের সময় আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াবে এবং কার্যক্ষমতার উন্নতি ঘটাবে। কিন্তু দিনে ২ কাপের বেশি ব্ল্যাক কফি পান শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ফলাফল
বিভিন্ন গবেষণা প্রমাণ করে যে, দুটি পানীয়ই ওজন কমানোর চেষ্টায় কার্যকরী হতে পারে। এদের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। কিন্তু যখন সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করা হবে, সেক্ষেত্রে গ্রিন টি ব্ল্যাক কফি থেকে বেশি উপকারী। গ্রিন টি এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং এতে প্রমাণিত নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
মনে রাখবেন স্বাস্থ্যকর জিনিসগুলোও পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। একই সাথে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার অভ্যাস ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। শুধুমাত্র গ্রিন টি বা ব্ল্যাক কফি খেয়েই ওজন কমানো যায় না। আপনাকে আপনার জীবন যাত্রায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনও করতে হবে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
টাইমস/নওশাদ/এনজে