আধুনিক জীবনে নানা প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারে আমরা সবাই অভ্যস্ত। হেডফোন বা ইয়ারফোন এমনি একটি প্রযুক্তিপণ্য।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অনেকেই এখন বাড়ি থেকে কাজ করেন, এ সময় অনেকেই ইয়ারফোন ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া শিক্ষার্থীরাও ইয়ারফোন ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস করেন।
তবে অতিরিক্ত ইয়ারফোন ব্যবহারের বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে হেডফোন এবং ইয়ারপডের ব্যবহারেরে ফলে কানে ব্যথা, জ্বালা এবং সংক্রমণ জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভারতের মুম্বাইয়ের সরকার পরিচালিত জে জে হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান ডঃ শ্রীনিবাস চ্যাভন বলেছেন, “এই সমস্ত স্বাস্থ্য সমস্যা অতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহারের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এখন প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশ জন লোক জে জে হাসপাতালের কান, নাক এবং গলা (ইএনটি) বিভাগে এই জাতীয় অভিযোগ নিয়ে আসছেন। তাদের বেশিরভাগই হেডফোন ব্যবহার করে আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন।”
তিনি বলেন, “এটি তাদের কানে প্রচুর চাপ সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে আনস্টারিলাইজড ইয়ারপড বা কানের প্লাগগুলিতে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চতর শব্দ অবিরাম শুনে যাওয়ার ফলে শ্রবণ ক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
এই অভ্যাস পরিবর্তন না করলে তাদের কানের “স্থায়ী ক্ষতি” হতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।
তার মতে, কানের অভ্যন্তরে এক ধরণের মোম জাতীয় পদার্থ প্রাকৃতিক ভাবে ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করে এবং সংক্রমণ রোধ করে। কিন্তু কান পরিষ্কার করার জন্য কটন বাড ব্যবহার এই প্রতিরক্ষামূলক মোমের আচ্ছাদনটি সরিয়ে দেয় এবং কানের অভ্যন্তরের অংশটিকে ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের জন্য উন্মোচিত করে। এছাড়াও এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যকর রাখতে তাজা বাতাস প্রয়োজন।
কীভাবে এই ধরনের সংক্রমণ এড়ানো যায় তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা ব্যবহারকারীদের মাঝে মধ্যে কান থেকে ইয়ারফোন অপসারণের পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলি নিরাপদ রাখতে তাজা বাতাস কানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করাতে দেয়া উচিত।”
সেন্ট জর্জ হাসপাতালের ইএনটি ইউনিটের প্রধান ডাঃ রাহুল কুলকার্নির মতে, কানের সমস্যাগুলি কেবল কর্মজীবীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, অনলাইন ক্লাসে পড়াশুনা করা শিক্ষার্থীরাও এ ধরণের সমস্যার শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, “আদর্শগত ভাবে, স্কুলে যাচ্ছে এমন বাচ্চাদের হেডফোন ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়। যদি তারা ল্যাপটপ বা ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ক্লাস করে তাহলে হেডফোন ব্যবহার না করাই উচিত।”
ডক্টর কুলকার্নি বলেন, “কীভাবে হেডফোনে উচ্চ শব্দের ভলিউম ব্যবহার করা এড়িয়ে কল, কনফারেন্স কল এবং ভিডিও কনফারেন্সে কথোপকথন করা যায় সে সম্পর্কে মানুষ অসচেতন।”
তিনি আরও বলেন, “স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের অবশ্যই ৬০ ডেসিবলের বেশি শব্দে হেডফোন ব্যবহার করা উচিত নয়, এটি স্বাভাবিকভাবেই তাদের শ্রবণশক্তির উপর চাপ সৃষ্টি করবে।”
শিশুরা তাদের ক্লাসে পড়ার সময় কতটা ভলিউম ব্যবহার করছে সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। যদি তারা হেডফোনে উচ্চতর ভলিউমে ক্লাস শুনেন তবে এটি ভবিষ্যতে জটিল সমস্যার কারণ হতে পারে। এমনকি এটি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যও ক্ষতিকর।”
তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
টাইমস/এনজে