আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কোভিড-১৯ এর পাশাপাশি মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগটির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীরা যদি একইসাথে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসেও আক্রান্ত হন তাহলে রোগের জটিলতা এবং মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যেহেতু ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং দেশটির সাথে বাংলাদেশের বহুমুখী আদান-প্রদানের সম্পর্ক রয়েছে, তাই আমাদের এখানেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়েও ছড়িয়ে পড়েছে নানা ধরণের গুজব। সতর্কতা অবলম্বন অবশ্যই ইতিবাচক, তবে মিথ্যা গুজবে কান দিয়ে আতঙ্কিত হওয়া সচেতন নাগরিকের কাজ নয়।
সাধারণত মাটি, ধুলো, পচে যাওয়া শাক-সবজি ও প্রাণীর বিষ্ঠায় এই ফাঙ্গাসটি বসবাস করে। মানব দেহ এই ধরণের ফাঙ্গাসের জন্য উর্বর ক্ষেত্র নয়। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুব সহজেই এ জাতীয় ফাঙ্গাসের সংক্রমণ রোধ করতে সক্ষম।
কিন্তু ডায়াবেটিস বা কোভিড-১৯ এর মতো রোগ বা স্টেরয়েড চিকিৎসার কারণে যখন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে তখন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সহজে আমাদের দেহে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ সাধারণত নাক থেকে শুরু হয়ে সাইনাস, চোয়াল, মুখমণ্ডল, চোখ ও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।
কোভিড-১৯ মহামারির পূর্বেও ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বিশ্বের অন্যান্য স্থানের তুলনায় অনেকে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর আবির্ভাবের আগেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস একটি প্রাণঘাতী রোগ হিসেবেই বিবেচিত হতো।
আসুন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সম্পর্কিত কিছু গুজব ও বাস্তবতা সম্পর্কে জেনে নিই-
রোগটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগটি রোগটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় এটি সম্পূর্ণ মনগড়া একটি গুজব, বাস্তবের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগটি সেই অর্থে ছোঁয়াচে নয়। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টিনে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বরং সাধারণত পরিবেশগত উৎস থেকে সংক্রমণ ঘটে। ছত্রাক দ্বারা উৎপাদিত বায়ুবাহিত স্পোর থেকে অনেক সময় সংক্রমণ ছড়ায়।
পানি, অক্সিজেন সিলিন্ডার, আর্দ্রকরণ যন্ত্র প্রভৃতি স্থানে ছত্রাকটি বেড়ে ওঠে
কেউ কেউ দাবি করছেন যে, এই ছত্রাক হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডার বা হিউমিডিফায়ারে নোংরা জলে বাড়ছে। তবে, এর সপক্ষে কোন ধরণের প্রমাণ নেই। মাইকোলজিস্টদের মতে, ছত্রাকগুলি তরল পদার্থে বীজ উৎপাদন করতে পারে না।
তাছাড়া সিলিন্ডারে সঞ্চিত খাঁটি অক্সিজেন সব ধরণের অণুজীবের বৃদ্ধির জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করে। সুতরাং পানি, অক্সিজেন সিলিন্ডার, আর্দ্রকরণ যন্ত্র প্রভৃতি স্থানে ছত্রাকটি বেড়ে ওঠে এই ধারণাও ভিত্তিহীন।
ফেস মাস্ক ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আবাসস্থল
এটি আরেকটি বহুল প্রচলিত গুজব। ফেস মাস্কে ছত্রাকটি আশ্রয় নিতে পারে এমন কোনও প্রমাণ নেই।
পেয়াজ থেকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছড়ায়
আরেকটি গুজব হচ্ছে পেয়াজের উপর মাঝে মধ্যে যে কালো আস্তরণটি দেখা যায় সেটি মূলত
মিউকোরাল ছত্রাক এবং এটি সংক্রমণের সম্ভাব্য একটি উৎস। এই দাবিটিও সম্পূর্ণ অবাস্তব। আসলে, পেঁয়াজ এবং রসুনের মধ্যে যে কালো আস্তরণ দেখা যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম ‘অ্যাসপারজিলাস নাইজার’। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
২০১৯ সাইন্স ডাইরেক্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, মিউকোরাল ছত্রাক সাধারণত রুটি তৈরির মোল্ড, পচে যাওয়া ফল এবং শাকসবজি, ফসলের অবশিষ্টাংশ, মাটি, কম্পোস্ট এবং পশুর বিষ্ঠার উপর জন্মে।
এই ধরণের ছত্রাকের টিকে থাকার জন্য উচ্চমাত্রার আর্দ্রতা প্রয়োজন হয়, তাই সাধারণত আসবাবপত্রে এগুলির বিস্তার ঘটে না। তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে।
টাইমস/এনজে