মেহেরুন আক্তার এবং জিয়াউল হাসান। সংসার জীবনের এক যুগ পার করেছে। কিন্তু এতদিনেও সন্তান না হওয়ায় তাদের জীবনে নেমে এসেছে হতাশার ছায়া। আর এ জন্য অনেকটা নরকে পরিণত হয়েছে মেহেরুনের জীবন। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর যখন মেহেরুনের সব রিপোর্ট স্বাভাবিক তখন তার স্বামীকেও কিছু পরীক্ষা করতে বলে চিকিৎসক। তখনই সে জানতে পারে সমস্যা জিয়াউল হাসানের।
আমাদের সমাজে সন্তান না হওয়ার দায়টা নারীর ওপরই বর্তায়। আমরা খেয়ালই করি না যে এতে পুরুষ সঙ্গীরও ভুমিকা আছে। অথচ প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষদের সমস্যার কারণে সন্তান হয় না। কিন্তু সমাজে এ বিষয়ে তেমন আলোচনা হয় না।
পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের মূল কারণ বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ কম হওয়া। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান এনএইচএসের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, যে দম্পতিদের সন্তান হয়না, তাদের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এর কারণ হচ্ছে - স্বামীর শুক্রাণুর মান নিম্ন ও সংখ্যা কম হওয়া।
চিকিৎসকদের মতে, প্রতি মিলিলিটারে শুক্রাণুর সংখ্যা ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটির কম হলেই প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসি জানান এটি শরীরের প্রজননগত অসুখ। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক পুরুষ এই জটিল সমস্যায় আক্রান্ত। এ বিষয়ে সবার আগে বীর্যের মান বা স্পার্ম কাউন্ট করা হয়। যদি এসবে কোনো ধরনের সমস্যা না থাকে, তাহলে পরবর্তী ধাপে অন্যান্য ইনভেসটিগেশন করা হয় ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম জানান , পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের মূল কারণ হলো পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন শুক্রাণু তৈরি না করতে পারা। ৩০-৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে শুক্রাশয়ের গুণগত ত্রুটি, ১০-২০ শতাংশ ক্ষেত্রে শুক্রাণু বেরোনোর পথে প্রতিবন্ধকতার কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা যায়। ১-৫ শতাংশ ক্ষেত্রে হরমোনজনিত সমস্যার কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। পিটুইটারি গ্রন্থি বা হাইপোথ্যালামাসের সমস্যা এ ক্ষেত্রে অন্যতম দায়ী।
পুরুষদের বন্ধ্যত্ব শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রোগীর পরিপূর্ণ তথ্য ও ইতিহাস জানা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় চিকিৎসকের কাছে তথ্য গোপন করা হয়। যা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়।
এছাড়া অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা, সংক্রমণ, ধূমপান ও বিভিন্ন ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার, অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া, পরিবেশের নানাবিধ দূষণও দায়ী হতে পারে। এ ছাড়া শুক্রাশয়ের সংক্রমণ, ফুলে যাওয়া কিংবা জেনেটিক বা ক্রোমোজমাল সমস্যা দেরিতে ধরা পড়ার কারণেও সন্তান না হতে পারে।
ডা. মুনিরা ফেরদৌসি বলেন, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে বাচ্চা না হওয়ার জন্য শুধু মেয়েদের দায়ী করা হয়। এ জন্য তাদের অনেক মানসিক অশান্তির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আবার কারও কোনো সমস্যা না থাকলেও বাচ্চা না হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। তাই এ বিষয়ে সব চেয়ে গুরুত্বপুর্ণ সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসা।
টাইমস/এসজে