জীবন রক্ষায় দ্রুত টিকা নিন: প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ এবং অতি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন থেকে সুরক্ষা এবং জীবন রক্ষায় দেশের সব মানুষকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবন থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্সের উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সবাইকে বলব, স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে। আমরা ইতোমধ্যে কিছু নির্দেশনা দিয়েছি, সেই নির্দেশনাগুলো সবাই মেনে চলবেন।’

শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান প্রদর্শনী, বিজ্ঞান মেলা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমের অবারিত সুযোগ করে দিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তৈরি করা হয়েছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স। ২০১৪ সালে শুরু হয় ভবনটির নির্মাণ কাজ।


এতে আছে ৮ হাজার বর্গফুটের অডিটোরিয়াম। আছে বিজ্ঞান প্রদর্শনীর লক্ষ্যে বিশাল সুসজ্জিত হলরুম, লাইব্রেরি ও আর্কাইভ।

কমপ্লেক্সটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, উন্নয়ন গবেষণার জন্যই এসব করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তির এই যুগে যেসব দেশ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে তারাই অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নতি করতে পারছে। কাজেই আমাদের উন্নতি করতে হলে গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন।’

স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণাটা আমাদের দেশে আসলে খুব কম হচ্ছে। আমাদের দেশে অনেক চিকিৎসক আছেন, যারা রোগী সেবা দিতে যতটা আগ্রহী, কিন্তু গবেষণার ক্ষেত্রে হাতে গোনা কয়েকজনই গবেষণা করেন। এক্ষেত্রে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণাটা একান্তভাবে দরকার।’

শুধু গবেষণাতে সীমাবদ্ধ না থেকে গবেষণালব্ধ জ্ঞান দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কীভাবে ব্যবহার করা যায় সেটার ওপরও জোর দেয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘মৌলিক গবেষণার পাশাপাশি প্রায়োগিক গবেষণার ওপরও জোর দিতে হবে। যারা গবেষক তারা নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে কাজ করবেন। কারণ আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বা খাদ্য উৎপাদন বা আমরা যে অবকাঠামো উন্নয়ন করি, ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে, সবক্ষেত্রে আসলে গবেষণার প্রয়োজন।’

গবেষণা ছাড়া উৎকর্ষতা লাভ করা যায় না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন করতে গেলে আমাদের গবেষণা একান্তভাবে দরকার। কাজেই আমি মনে করি, সবার গবেষণার প্রতি নজর দেয়া দরকার।’

দেশের সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর ওপরও তাগিদ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘দেশীয় সম্পদ যা আছে, আমাদের অনেক অমূল্য সম্পদ রয়ে গেছে, যা এখনও ব্যবহার করতে পারিনি বা আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সেগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তারপর গবেষণা করে সেগুলো যাতে আমাদের দেশের মানুষের কাজে লাগে সে বিষয়ে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতেও গবেষণায় জোর দেয়া দরকার বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত সারা বিশ্বে প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রভাব বাড়ছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে গেলে আমাদেরকেও সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। গবেষণায় নজর দিতে হবে।

‘বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের বুকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। সারা বিশ্বের কাছে মর্যাদা পাচ্ছে। এমন দিন আগে ছিল না। ৯৬ সালের আগে, এমনকি ১৩-১৪ বছর আগের বাংলাদেশও চিন্তা করেন, তখন বাংলাদেশ কী ছিল।

‘তখন বাংলাদেশের কথা শুনলে মানুষ মনে করত, বাংলাদেশে সম্ভাবনাই নেই। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে আমরা এগিয়ে যেতে পেরেছি। এ কারণেই যে গবেষণালব্ধ জ্ঞান তা আমরা ব্যবহার করতে পেরেছি।’

টানা তিন বার ক্ষমতায় আসায় দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিখাতে সরকার নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়েছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। আর প্রযুক্তি উন্নয়নে সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবদানের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদেরকে সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে। সে কিন্তু অবৈতনিক। এটা আমি জানিয়ে রাখি। কারণ অনেকে অনেক সময় অনেক উল্টা-পাল্টা কথা বলে। নিজের দেশের কল্যাণে, দেশের মানুষের শিক্ষায় সে কাজ করে যাচ্ছে, দেশের মানুষের জন্য।’

১৯৯৬ সালের আগে গবেষণায় কোনো সরকার কোনো বরাদ্দ রাখেনি বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে গবেষণায় একটি টাকাও কখনও বাজেটে ধরা ছিল না, ৯৬ সালে এসে আমি দেখি। তখনই প্রথম আমি একটা থোক বরাদ্দ দিই। এরপর থেকে আমরা প্রতি বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখি শুধু গবেষণার জন্য। ৯৬ সাল থেকে এটা আমি শুরু করি।’

Share this news on:

সর্বশেষ

img

কায়সার কামাল

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নয়, আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হন খালেদা জিয়া Dec 31, 2025
img
গোপালগঞ্জ-০৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী জিলানী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে স্ত্রীর মনোনয়নপত্র জমা Dec 31, 2025
এভারেস্টে আরোহীপ্রতি ৪ হাজার ডলার ফি প্রস্তাব নেপালের Dec 31, 2025
img
ঢাকা-১১ আসন ছেড়ে দেওয়া জামায়াত প্রার্থীর বাসায় নাহিদ ইসলাম Dec 31, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Dec 31, 2025
স্বামীর কবরের পাশেই সমাহিত হবেন বেগম জিয়া Dec 31, 2025
img
২০২৬-এর টক্সিক ঘিরে আগ্রহ তুঙ্গে Dec 31, 2025
img
হাকিমির ফেরার ম্যাচে জাম্বিয়াকে ৩-০ গোলে হারাল মরক্কো Dec 31, 2025
img
ডেজাট ভাইপার্সের কাছে ৪৫ রানে হারল সাকিবের দল Dec 31, 2025
img
নতুন বছরে আবার দলকে শীর্ষে তোলার প্রত্যয় ভিনিসিউসের Dec 31, 2025
img
গোবিন্দগঞ্জে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল পথচারী নারীর Dec 31, 2025
img
রোনালদোর দুর্দান্ত গোল, আল ইত্তিফাকের মাঠে ২-২ ড্র করল আল নাসর Dec 31, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও জিততে পারল না ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড Dec 31, 2025
img
আলোচনায় আল্লু অর্জুনের নতুন মাফিয়া ছবি Dec 31, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

অ্যাস্টন ভিলাকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিল আর্সেনাল Dec 31, 2025
img

মার্কিন থিঙ্কট্যাংকের প্রতিবেদন

২০২৬ সালে ফের সংঘাতে জড়াতে পারে ভারত ও পাকিস্তান Dec 31, 2025
img

খালেদা জিয়ার জানাজা

দক্ষিণ প্লাজায় নয়, কফিন থাকবে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পশ্চিমে Dec 31, 2025
img
রোজায় বন্ধ থাকবে সব কলেজ, বার্ষিক ছুটি ৭২ দিন Dec 31, 2025
img
জুলাইয়ের সবশেষ শহীদ শফিকুলকে নিয়ে জামায়াত আমিরের ফেসবুক পোস্ট Dec 31, 2025
img
না ফেরার দেশে আতলেটিকো মাদ্রিদের গ্রেট অধিনায়ক কলার Dec 31, 2025