শেয়ারবাজারে এবার ভয়াবহ দরপতন

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৭ মার্চ) দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন হয়েছে। ২০২০ সালের পর এতো বড় দরপতন আর দেখা যায়নি। শেয়ারবাজারের এ দরপতনকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন বিশ্লেষকরা। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পুঁজি করে কোনো চক্র কম দামে শেয়ার কেনার জন্য এ দরপতন ঘটাচ্ছে।

তারা বলছেন, ক’দিন ধরেই শেয়ারবাজার নেতিবাচক ধারায় ছিল। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে টানা বড় দরপতন দেখা যাচ্ছে। অথচ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং এ যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এমন দরপতনের কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই দরপতনের তালিকায় নাম লেখাতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান, যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ফলে দিনের লেনদেন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মাত্র সাতটি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৬৪টির। ৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১৮২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪৫৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর আগে ২০২০ সালের ১৬ মার্চ সূচকটি ১৯৬ পয়েন্ট কমেছিল। এরপর গত দুই বছরে দেশের শেয়ারবাজারে আর এতো বড় দরপতন দেখা যায়নি।

ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে অন্য দুই সূচকের। এর মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬৪ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ৩৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

গত বছরের অক্টোবর থেকেই দেশের শেয়ারবাজারে নেতিবাচক ধারা বিরাজ করলেও সম্প্রতি ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর দরপতনের মাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পরে দেশের শেয়ারবাজারে এ পর্যন্ত আট কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সাত কার্যদিবসেই দরপতনে পার করেছে শেয়ারবাজার। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ৪৯২ পয়েন্ট।

শেয়ারবাজারে ভয়াবহ এ দরপতনের বিষয়ে ডিএসইর একাধিক সদস্য বলছেন, এখন বাজারে যেভাবে দরপতন হচ্ছে এটা কিছুতেই স্বাভাবিক নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কোনো বিশেষ চক্র এ দরপতন ঘটানোর পেছনে থাকতে পারে। তাই অযাচিত বিক্রির চাপ বাড়িয়ে যে দরপতন ঘটানো হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দেখা উচিত।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, অনেকদিন ধরেই শেয়ারবাজার নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামারিক অভিযান শুরু হলো। আসলে আমাদের বিনিয়োগকারীরা হুজুগে বিনিয়োগ করেন। এ যুদ্ধের কোনো প্রভাব আমাদের দেশে পড়ার কথা নয়।

তিনি বলেন, ১০-১২ বছর ধরেই শেয়ারবাজারে ধীরগতি। হঠাৎ করেই সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্ট থেকে সূচক সাড়ে সাত হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি চলে যায়। এটা কখনো স্থিতিশীল হয়নি। বাজারের ওপর কঠিন আস্থা ছিল তা নয়। আমার ধারণা, বিভিন্নভাবে সূচকটা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে পেনিক সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি বাজার অতিমূল্যায়িত হয়নি এবং এভাবে দরপতনের যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই।

এদিকে সূচকের টানা পতনের সঙ্গে লেনদেন খরাও দেখা দিয়েছে শেয়ারবাজারে। সোমবার দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৪০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে টানা সাত কার্যদিবস ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার কম লেনদেন হলো।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪৫৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫৪টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আটলান্টিক মহাসাগরে নৌকাডুবি, ১২ জনের নিথর দেহ উদ্ধার Dec 27, 2025
img
ঘন কুয়াশায় পদ্মার চরে আটকে পড়া লঞ্চের শতাধিক যাত্রী উদ্ধার Dec 27, 2025
img
খুলনায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় প্রাণ গেল নারীর, চালক আটক Dec 27, 2025
img
রজনীকান্তের সঙ্গে বড় পর্দায় প্রথমবার শাহরুখ Dec 27, 2025
img
হারের জন্য 'শিশিরকে' দুষলেন মিরাজ Dec 27, 2025
img
পরচুলা পরে করা যাবে না অভিনয়, দাবি পূরণ না হওয়াতেই ‘দৃশ্যম ৩’ থেকে সরলেন অক্ষয় খান্না! Dec 27, 2025
img
ভারতে বাংলাদেশিদের হোটেল ভাড়া না দেওয়ার হুমকি Dec 27, 2025
img
টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন নগর সরকার : চসিক মেয়র Dec 27, 2025
img
সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে নতুন নির্দেশনা অধিদপ্তরের Dec 27, 2025
img
নিজেদের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রামের বিপক্ষে নোয়াখালীর হার Dec 27, 2025
img
মধ্যরাতে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষ, আহত ১০ Dec 27, 2025
img
অনুমতি জটিলতায় তাহেরির ওয়াজ মাহফিল বন্ধ, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা Dec 27, 2025
img
ইতালিতে বাংলাদেশিদের হাতেই নির্যাতিত বাংলাদেশি Dec 27, 2025
img
জবির ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ, আসনপ্রতি লড়বেন ৪০ জন Dec 27, 2025
img
রাতেই জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিষ্কার করলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা Dec 27, 2025
img
আজ যেসব কর্মসূচিতে যাচ্ছেন তারেক রহমান Dec 27, 2025
img
রাশেদ খাঁনের দলত্যাগের সিদ্ধান্ত ‘নির্বাচনে জয়ের কৌশল’ : নুর Dec 27, 2025
img
নতুন ছবি মুক্তির আগে সমালোচনার কেন্দ্রে কার্তিক Dec 27, 2025
img
পুষ্পার পর এবার হাজার কোটি বাজেটে আল্লু অর্জুনের মহাযাত্রা Dec 27, 2025
img
ফরিদপুরে জেমসের কনসার্টে হামলা-ভাঙচুর Dec 27, 2025