গাজায় প্রতি ১০ মিনিটে একটি শিশু নিহত হচ্ছে: ডব্লিউএইচও

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গড়ে প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে শিশু নিহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। একইসঙ্গে গাজায় কোনও জায়গাই নিরাপদ নয় এবং কেউই নিরাপদে নেই বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

এমনকি গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পতনের দ্বারপ্রান্তে বলেও জানানো হয়েছে। শনিবার (১১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় গড়ে প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে শিশু নিহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস। শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি সতর্ক করে বলেছেন: ‘গাজায় কোনও জায়গাই নিরাপদ নয় এবং সেখানে কেউই নিরাপদে নেই।’

তিনি বলেন, গাজার ৩৬ টি হাসপাতালের অর্ধেক এবং ভূখণ্ডটির প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর দুই-তৃতীয়াংশই এখন আর কাজ করছে না এবং এখনও যেসব হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সক্রিয় রয়েছে, পরিস্থিতি তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এমনকি গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ‘পতনের দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে বলেও বর্ণনা করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রধান।

১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদকে টেড্রোস বলেন, ‘গাজার হাসপাতালের করিডোর পর্যন্ত আহত, অসুস্থ, মৃত ব্যক্তিদের ভিড়ে ভরে গেছে। মর্গ উপচে পড়ছে। অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ হাসপাতালে আশ্রয় নিচ্ছেন।’

মূলত গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া ইসরায়েলের এই বিমান হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল ও বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে।

অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি শিশু। এছাড়া নিহতদের মধ্যে নারীর সংখ্যাও তিন হাজারের বেশি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা শুক্রবার গাজা শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই ৪ হাজার ৫০৬ জন। এছাড়া নিহতদের মধ্যে ৩ হাজার ২৭ জন নারী এবং ৬৭৮ জন বৃদ্ধ রয়েছেন। ইসরায়েলি আগ্রাসনে আহত হয়েছেন আরও ২৭ হাজার ৪৯০ জন।’

তিনি বলেন, ইসরায়েলি হামলায় দেড় হাজার শিশুসহ ২ হাজার ৭০০ জন লোক এখনও বিধ্বস্ত বহু ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন বলে জানা গেছে।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, ‘গাজায় গড়ে প্রতি ১০ মিনিটে একজন করে শিশু নিহত হচ্ছে।’

টেড্রোস বলেন, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা এবং পশ্চিম তীরে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর ওপর ২৫০ টিরও বেশি আক্রমণের ঘটনা যাচাই করেছে ডব্লিউএইচও। অন্যদিকে ইসরায়েলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর ২৫টি হামলা হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে, যদিও হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এদিকে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, ইসরায়েল দক্ষিণ গাজায় হাসপাতাল স্থাপনের জন্য একটি টাস্কফোর্স তৈরি করেছে। ইসরায়েল স্থল আক্রমণের আগে গত ১২ অক্টোবর গাজার প্রায় ১১ লাখ মানুষকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

তিনি দাবি করেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত, আইসিআরসি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করছে ইসরায়েল। এছাড়া ইসরায়েল উত্তর গাজার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সহায়তা দিতে জর্ডানের বিমানকেও সহায়তা করেছে।’

তার দাবি, ‘ডব্লিউএইচও বা জাতিসংঘের অন্য যেকোনও সংস্থার চেয়ে গাজাবাসীর মঙ্গলের জন্য অনেক বেশি কাজ করছে ইসরায়েল।’

অন্যদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজার হাসপাতালগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ করার চেষ্টা করছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বেসামরিক এবং মানবিক সুযোগ-সুবিধাকে অবশ্যই সম্মান ও সুরক্ষিত করতে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কেউ চার প্রশ্নে একমত না হলে কীভাবে গণভোট দেবেন, প্রশ্ন রিজভীর Nov 15, 2025
img
বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম জেন জি বিধায়ক হলেন গায়িকা মৈথিলী ঠাকুর Nov 15, 2025
img
মুসলমানদের মৌলিক দাবি আদায় না হলে আমরা সেই সংবিধান মানিনা: এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী Nov 15, 2025
img
ক্যারিবীয় সাগরে নৌযানে মার্কিন হামলা, প্রাণহানি ৪ Nov 15, 2025
img
রাজনৈতিক দলের পদধারী কেউ প্রেসক্লাবের কমিটিতে থাকতে পারবে না: সারজিস আলম Nov 15, 2025
img
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি সমর্থিত ২ গ্রুপের সংঘর্ষ Nov 15, 2025
img
দাদাগিরি বন্ধ করে ভারতকে বন্ধুসুলভ আচরণের আহ্বান মির্জা ফখরুলের Nov 15, 2025
img
নিশোকে ঘিরে রহস্যের সমাধান, নতুন মুখ হামজা Nov 15, 2025
img
মাত্র ২৮ দিনের মাথায় মাদারীপুরের ডিসি পরিবর্তন, নতুন দায়িত্বে জাহাঙ্গীর আলম Nov 15, 2025
img
বিএনপির কাছে বাংলাদেশ নিরাপদ না: সাদ্দাম Nov 15, 2025
img
বিস্ফোরণে পুড়ল আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকের বাড়ি Nov 15, 2025
img
আশরাফুল হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য জানাল র‍্যাব Nov 15, 2025
img
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা কমে যাচ্ছে: আর মাধবন Nov 15, 2025
img
১৪, ১৮ ও ২৪’র মতো নির্বাচন হলে জাতির চরম দুর্ভোগ হবে: গোলাম পরওয়ার Nov 15, 2025
img
মামদানির প্রশাসনে যোগ দিতে ৫০ হাজারের বেশি আবেদন Nov 15, 2025
img
বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাতেই সম্পর্কের দৃঢ়তা: রণবীর Nov 15, 2025
img
আগামী পাঁচদিন যেমন থাকবে আবহাওয়া পরিস্থিতি Nov 15, 2025
img
গুরুতর চোট নিয়ে মাঠ ছাড়লেন শুবমান গিল Nov 15, 2025
img
আমি অন্য কারও মতো হতে চাই না: শ্রেয়া ঘোষাল Nov 15, 2025
img
‘সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল না’, সিএনএন-নিউজ এইটিনকে হাসিনা Nov 15, 2025