জ্বালানি খাতে বকেয়া ৯৭ কোটি ডলার: সিপিডি

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সরবরাহকারীদের কাছে ৯৭ কোটি মার্কিন ডলার বকেয়া পড়েছে বাংলাদেশের। জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানি বাবদ বিপিসি ও পেট্রোবাংলার কাছে এই অর্থ পাবে বিদেশি তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উপর প্রতিবেদন ‌‘পরিবর্তনের পথে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত’ প্রকাশ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল সিপিডি। সংস্থাটি প্রতি ৩ মাস পরপর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম কোয়ার্টারের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্স এসোসিয়েটস হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি।


সিপিডির ডিরেক্টর রিসার্চ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমদানি প্রবণতার কারণে পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের বকেয়া বাড়ছে। পেট্রোবাংলা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) কাছে ৬ মাসের জন্য ৫০ কোটি ডলার সিন্ডিকেট ঋণ নিচ্ছে। সিন্ডিকেট ঋণ সাময়িক সময়ের জন্য স্বস্তি মনে হলেও বিপদ বাড়াবে। কারণ তখন সুদও দিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশীয় জ্বালানি উত্তোলনে গুরুত্ব না দিয়ে আমদানিতে জোর দেওয়ায় আজকের এই সংকট। পুরোনো গ্যাস কূপের সংস্কার যথাসময়ে হলেও এই সংকট হতো না। যত দ্রুত সম্ভব আমদানি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানির দিকে যেতে হবে। তাহলে ডলার সংকট দূর হবে।


এক প্রশ্নের জবাবে মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এক সময় উদ্বৃত্ত ছিল, এখন বাহুল্য হয়ে গেছে। ৫১ শতাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেকার পড়ে থাকছে যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। পাশাপাশি পুরাতন বিদ্যুৎকেন্দ্রর চুক্তি নবায়ন করা উচিত হবে না।

সিপিডির ডিরেক্টর বলেন, সবকিছুর মূলে হচ্ছে দায়মুক্তি আইন। যদি প্রতিযোগিতামূলক বাজার থাকত তাহলে এমন অসম চুক্তি হতো না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে মালিকের নাম বসালে দারুণ একটি যোগসূত্র দেখা যায়। নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি এসব সুবিধা পাচ্ছে। চুক্তির অস্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকেই যায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০৪০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। কার্যক্রমের অগ্রগতি ধীর।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে এলএনজি আমদানি নীতি সিদ্ধান্ত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কাতারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। আরও দু’টি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং গ্যাস রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট) স্থাপনের চুক্তি করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য নতুন করে ২০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দিকে জোর দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়, বিদ্যুতের সবচেয়ে কম ব্যবহার হচ্ছে ময়মনসিংহ ও রংপুর অঞ্চলে। তবে গত ৩ মাসে এসব অঞ্চলেই বেশি লোডশেডিং দেওয়া হয়েছে। লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু উৎপাদন ঘাটতি নয়, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণেও লোডশেডিং বেড়েছে। গত জুনে সঞ্চালন সমস্যার কারণে প্রায় ২৪১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকে। আগস্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল ৫০১৬ ঘণ্টা।


Share this news on:

সর্বশেষ

img
নারী এশিয়া কাপ: বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে ভারত Jul 26, 2024
img
সহিংসতায় ঢাকায় ২০৯ মামলা, গ্রেপ্তার ২৩৫৭ Jul 26, 2024
img
সহিংসতায় আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেলেন প্রধানমন্ত্রী Jul 26, 2024
img
৩০০ কক্ষ ভাঙচুর, সংস্কারের পরই চালু হবে শিক্ষা কার্যক্রম: ঢাবি উপাচার্য Jul 26, 2024
img
অলিম্পিক উদ্বোধনের আগেই ফ্রান্সে দ্রুতগতির রেল নেটওয়ার্কে হামলা ও অগ্নিসংযোগ Jul 26, 2024
img
আহতদের চিকিৎসা-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী Jul 26, 2024
img
পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ : হারুন Jul 26, 2024
img
ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার বাস Jul 26, 2024
img
‘হাসিন দিলরুবা’র পরের কিস্তিতে চমক নিয়ে আসছেন তাপসী পান্নু Jul 26, 2024
img
শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভুল প্রতিবেদন, ক্ষমা চাইল ‘ইন্ডিয়া টুডে এনই’ Jul 26, 2024