জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত বিএনপির : কাদের

অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিএনপি নেতাদের জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
 
বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক দাবি করে মন্ত্রী এ সময় বলেন, বিএনপি নেতাদের উচিত তাদের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের জন্য জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা। অথচ তারা সেটা না করে বরাবরের মতো দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের হত্যাকারীরা আজ যখন গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলে তখন বুঝতে হবে, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য তাদের মায়াকান্না ছাড়া আর কিছু নয়।

গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণতন্ত্রের জন্য তাদের এই আহাজারি মূলত একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড, হাওয়া ভবন-খোয়াব ভবনের অধিপতি, দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তায়নের বরপুত্র তারেক রহমানের দুঃশাসনের যুগে দেশকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু, এ দেশের গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজ এই অন্ধকারের অপশক্তির বিরুদ্ধে আজ ঐক্যবদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, পঁচাত্তরের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের পর খুনি জিয়ার হাতে জন্ম নেওয়া বিএনপি যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে, ইতিহাস তখন বিদ্রূপের হাসি হাসে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ইতিহাসের নিষ্ঠুর সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে অসাংবিধানিক পন্থায় বন্দুকের নলের মুখে জাতিকে জিম্মি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল। বিচারপতি সায়েমকে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে সরিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেছিল সে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাংলাদেশ স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে মানবসভ্যতার ইতিহাসে নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা হয়েছিল। পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করা হয়েছিল। একইভাবে হস্তবকের দল ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছিল। সেদিন ঘাতকচক্র অসহায় নারী, শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল। সেদিন কোথায় ছিল গণতন্ত্র? কোথায় ছিল মানবাধিকার?

তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালে হ্যাঁ-না ভোটের প্রহসনের নির্বাচনের নামে দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান। জিয়ার তথাকথিত গণতন্ত্র ছিল কারফিউ মার্কা গণতন্ত্র। লাগাতার সামরিক শাসন বলবৎ রেখে জনগণের ওপর দুঃশাসনের স্টিমরোলার চালানো হয়েছিল। ১৯৭৮ সালের ৩ জুন সেনাপ্রধানের দায়িত্বে থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আয়োজন করে গণতন্ত্রকামী জনগণের সঙ্গে নির্মম তামাশা করেছিল স্বৈরাচার জিয়া। অবৈধভাবে একইসঙ্গে সেনাপ্রধান, প্রধান সামরিক আইন কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপতির পদ দখল করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছিল সে। পরিকল্পিতভাবে গলা টিপে হত্যা করেছিল গণতন্ত্রকে, নির্বাসিত করেছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে।

সেই স্বৈরাচার জিয়ার হাতে প্রতিষ্ঠিত বিএনপি এখনও সুপরিকল্পিতভাবে এদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন করেছিল বেগম খালেদা জিয়া। জাতিকে উপহার দিয়েছিল মিরপুর ও মাগুরা মার্কা উপ-নির্বাচন। নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারায় আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন এবং ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার সৃষ্টি করেছিল বিএনপি। অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে তখন বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়াবহ নজির স্থাপন করা হয়েছিল। ২০০১ পরবর্তী সময়কালে বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। স্বৈরাচারের গর্ভে জন্ম নেওয়া বিএনপি সুপরিকল্পিতভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও মূল্যবোধ এবং গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে এখনও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপিই এ দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শ বাস্তবায়নের প্রধান প্রতিবন্ধক।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
১৪ জুলাই স্মরণে মধ্যরাতে রাজপথে নারী শিক্ষার্থীদের মিছিল Jul 15, 2025
img
এনসিপি’র সমন্বয় কমিটি অনুমোদনের দুই দিনের মধ্যেই তিনজনের পদত্যাগ Jul 15, 2025
img
জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত নারীদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিল সরকার Jul 15, 2025
img
এনসিপি ভাগবাটোয়ারার রাজনীতিতে আগ্রহী নয়: নাহিদ ইসলাম Jul 15, 2025
img
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর Jul 15, 2025
img
পুতিনকে ৫০ দিনের আলটিমেটাম দিলেন ট্রাম্প Jul 15, 2025
img
মব জাস্টিস সমাজের মরণ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে : রিজভী Jul 15, 2025
img
১৪ জুলাই স্মরণে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে ফের উত্তাল ঢাবি Jul 15, 2025
img
টাকার বিপরীতে কমল ডলারের দাম Jul 15, 2025
img
বরগুনায় এনসিপির পথসভা, মঞ্চে সারজিসকে দেখে ‘দুলাভাই দুলাভাই’ স্লোগানে মুখর ছাত্র-জনতা Jul 15, 2025
img
'একজন প্লেয়ার হিসেবে সাকিবের বিকল্প নেই' Jul 14, 2025
img
নিজেরা মেঝেতে বসে শহীদদের মা-বাবাকে চেয়ারে বসালেন উপদেষ্টারা! Jul 14, 2025
img
ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা, আটক ২ Jul 14, 2025
img
জার্মান পার্লামেন্টে রংধনু পতাকা উত্তোলন নিষিদ্ধ Jul 14, 2025
img
৫০ ডিগ্রির ভয়াবহ গরমে কাঁপছে আমিরাত Jul 14, 2025
img
উচ্চকক্ষকে দুর্বল করার অপচেষ্টা চলছে: আখতার হোসেন Jul 14, 2025
img
সাগরে নিম্নচাপ: সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত Jul 14, 2025
img
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব সম্প্রদায়েরও বড় দায় আছে : কক্সবাজারে দুই উপদেষ্টা Jul 14, 2025
img
সিআইডি সেজে প্রবাসীর স্বর্ণালংকার লুট, মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণ Jul 14, 2025
img
সালাউদ্দিনকে সরানোর কোনো ভাবনা নেই বিসিবির Jul 14, 2025