২৬২ রানে অলআউট বাংলাদেশ, পিছিয়ে ১২ রানে

যেখানে শঙ্কা জেগেছিলো ফলো-অনের, সেখানে লিটন-মিরাজ রেকর্ড গড়া ১৬৫ রানে ভর করে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২৬২ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। এখনও তারা পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে আছে ১২ রানে।

রাওয়ালপিন্ডিতে গতকালের (শনিবার) বিনা উইকেটে ১০ রান নিয়ে আজ তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমেই খেই হারিয়ে ফেললো টাইগার ব্যাটাররা। পাকিস্তানের বোলিং তোপে তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় বাংলাদেশের ব্যাটং লাইন-আপ। যার ফলে মাত্র ২৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। এরফলে শঙ্কা জাগে ফলো-অনের। তবে এরপরেই জুটি গড়ে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাস। এই দুই ব্যাটারের ১০০ রানের জুটিতে ভর করে ফলো-অন এড়ায় বাংলাদেশ। এই জুটিতে ভর করে বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল টাইগাররা। তবে ১৬৫ রানেই থামতে হলো এই জুটিকে। দলীয় ১৯১ রানে মিরাজের বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। মিরাজ ফিরে গেলেও ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন লিটন।

পাকিস্তনের বিপক্ষে আজ তিনি ১৭১ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। তার সেঞ্চুরিতে ভর করে বিপর্যয় কাটিয়ে ২৬২ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। এখনও তারা পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে আছে ১২ রানে।

রাওয়ালপিন্ডিতে টানা বৃষ্টির কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের খেলা পরিত্যক্ত হয়েছে। তাই বাকি চার দিনের খেলা নির্ধারিত সময়ে ৩০ মিনিট আগে শুরু হওয়ার কথা। প্রতিদিন অন্তত ৯৮ ওভার করে খেলা হবে।

সেই হিসেবে আজ (রবিবার)তৃতীয় দিনের খেলাও শুরু হয়েছে ৩০ মিনিট আগে। তৃতীয় দিনে আজ ব্যাটিংয়ে নামেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। শুরু থেকেই এই দুই ব্যাটার দেখেশুনেই খেলতে থাকেন। তবে নিজদের জুটিকে বেশিদূর নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন তারা।

তৃতীয় দিনের শুরুতেই খুররাম শেহজাদের বলে শর্ট মিড উইকেটে আবরার আহমেদের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান জাকির হাসান। তার বিদায়ে ১৪ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

জাকিরের পর জোড়া আঘাত হেনে সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তকে সাজঘরে ফেরান খুররাম শেহজাদ। খুররাম শেহজাদের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। সাদমান ২৩ বলে ১০ ও শান্ত ৬ বলে ৪ রান করেন। এই দুই ব্যাটারের দ্রুত বিদায়ে ২০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

দলের বিপদ আরও আরও বাড়িয়ে পরের ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান মুমিনুল হক। মীর হামজার বলে মিড অনে মোহাম্মদ আলির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান মুমিনুল হক। তার বিদায়ে ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ।

২০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। তবে তারাও ব্যর্থ হন নিজেদের জুটিকে বেশিদূর নিয়ে যেতে। দলীয় ২৬ রানে মীর হামজার বলে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান মুশফিক।

মুশফিকের বিদায়ের পরের ওভারেই সাকিবকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন খুররাম শেহজাদ। খুররাম শেহজাদের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ফিরে যান সাকিব। তার বিদায়ে ২৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফলো-অনের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।

এরপরেই জুটি গড়ে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাস। এই দুই ব্যাটার মিলে দেখেশুনে খেলতে থাকেন। এই জুটির ৪৯ রানে ভর করে ৭৬ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

বিরতি থেকে ফিরে দেখেশুনেই খেলতে থাকেন তারা। এই জুটির ১০০ রানে ভর করে ফলো-অন এড়াতে প্রয়োজনীয় ১২৫ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। এর পরেই দুই ব্যাটারই তুলে নেন জোড়া অর্ধশতক। মিরাজ ৮১ বলে ও লিটন ৮৩ বলে তুলে নেন অর্ধশতক।

এই জুটিতে ভর করে বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল বাংলাদেশ। অবশেষে পাকিস্তানের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটিকে থামান খুররাম শেহজাদ। দলীয় ১৯১ রানে খুররাম শেহজাদের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান মিরাজ। আউট হওয়ার আগে করেন ১২৪ বলে ৭৮ রান। তার বিদায়ে ভাঙে ১৬৫ রানের জুটি।

ততক্ষণে অবশ্য একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন লিটন-মিরাজ। ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ৫০ রানের কমে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর সপ্তম উইকেটে সবচেয়ে বড় জুটি এটা।

এর আগে ৫০ রানের কমে ৬ উইকেট হারানোর পর সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটিটা ছিল ১১৫ রানের। ২০০৬ সালে করাচিতে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৩৯ রানে প্রথম ৬ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর সপ্তম উইকেটে ১১৫ রানের জুটি গড়েন আবদুল রাজ্জাক ও কামরান আকমল।

মিরাজের বিদায়ের পর খুররাম শেহজাদের ষষ্ঠ শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান তাসকিন আহমেদ। ৫ বলে মাত্র ১ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পর ৮ উইকেটে ১৮৩ রান করে চা পানের বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

চা বিরতি থেকে ফিরে হাসান মাহমুদকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন লিটন। তুলে নেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি। পাকিস্তনের বিপক্ষে আজ তিনি ১৭১ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি।

সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতেন থাকেন তিনি। তবে ২২৮ বলে ১৩৮ রান করে উড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। বাউন্ডারি লাইনে সাইম আইয়ুব নিয়েছেন ক্যাচ। সালমান আঘার বলে যখন লিটন আউট হয়েছেন তখন তার নামের পাশে ১৩৮ রান। নাহিদ রানা অবশ্য এরপর কিছু করতে পারেননি। একইওভারে ফিরেছেন তিনি। বাংলাদেশ থামল ২৬২ রানে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৬১ Jan 15, 2025
img
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া Jan 15, 2025
img
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশ নির্মাণ বাতিলের দাবি আইপিডির Jan 15, 2025
img
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন গ্রেপ্তার Jan 15, 2025
img
মধ্যরাতে সেন্টমার্টিনে ভয়াবহ আগুন, কয়েকটি রিসোর্ট পুড়ে ছাই Jan 15, 2025
img
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা গ্রেপ্তার Jan 15, 2025
img
ব্রিটেনের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক Jan 14, 2025
img
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক বৃহস্পতিবার Jan 14, 2025
img
বাড়ল এলপি গ্যাসের দাম Jan 14, 2025
img
মিথিলার সঙ্গে দূরত্ব! ঋতাভরীর সঙ্গে ছবি দিয়ে কী বললেন সৃজিত Jan 14, 2025