কিছুদিন আগেও জেলে ছিলেন উমেদ। সিলেট শহরে সন্ত্রাস ও ত্রাসের অভিযোগে পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত তিনি। সরকার পতনের পর বেরিয়ে গেছেন। এখন আওয়ামী লীগের ফেলে যাওয়া অফিস ও বাড়ি দখলে মরিয়া। আতংকে উপশহর শিবগঞ্জ টিলাগড় এলাকা বাসিন্দরা। কারণ তার সাইনবোর্ড এখন বিএনপি। উমেদ হত্যা রাহাজানিসহ অন্তত ২০টি মামলার আসামি। শুধু উমেদ নয় সারা দেশে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ‘অবাধ্য’ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ পড়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ ওঠে। বিভাগীয় পর্যায়ে উমেদের মত যুবদল ও বিএনপির অনেক নেতার নাম আসছে। যারা এখন লুটপাট ও বাড়ি দখল ও চাঁদাবাজিতে ভয়ংকর হয়ে উঠছে।
জানা গেছে, উমেদুর রহমান উমেদ যুবদল নেতা পরিচয়ে একটি বাহিনী সিলেটে তৈরি করেছেন। যারা তাকে যুবদলের সম্রাট আখ্যা দিয়ে ত্রাস চলাচ্ছে। ফেসবুকে এদের কয়েকটি গ্রুপ দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, একসময় সিলেটে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অভ্যন্তরীন গ্রুপে ভাড়ায় যোগ দিতেন উমেদ। এমন একদিন ভাড়ায় গিয়ে খুন করেন ছাত্রলীগ কর্মী তানিমকে। তখন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলে নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী তানিম। সেখানে একটি গ্রুপের হয়ে গিয়েছিলেন এই উমেদ। ওই হত্যা মামলার আসামী এই উমেদ। আওয়ামী লীগ আমলে স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে গ্রেফতার এড়িয়ে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়েছিলো সে।
এখন যুবদলের গ্রুপ উপগ্রুপ গড়ে তুললেও গেল সরকারের আমলে যুবদলে সক্রিয় ছিলেন না উমেদ- এমনটাই জানাচ্ছেন সিলেট বিএনপি নেতারা। আওয়ামী লীগের পলাতক কাউন্সিলর আজাদের টিলাগড় গ্রুপের ভাড়াটে হিসেবে কাজ করতন। সিলেট মহানগর যুবলীগের নেতা মুশফিক জায়গিরদার তাকে কাজে লাগাতেন। ৫ আগষ্টের পটপরিবর্তনের পরে মুশফিকের শিবগঞ্জ ও উপশহরের অফিস তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এই এলাকায় নতুন করে চাঁবাবাজি শুরু করেন বলে অভিযোগ। ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা চিনির ট্রাক সিলেট শহরে আটকে চাঁদা তুলছে তার বাহিনী।
শুধু সিলেট নয় বিএনপির সাইনবোর্ড বা পরিচয়ে সারাদেশে এরকম বহু নেতার নাম আসছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৩ জন নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫২৩ জনকে কারণ দর্শানোর নেটিশ, ৪৩৭ জনকে বহিষ্কার, ২৪ জনের পদ স্থগিত, ৩৫ জনকে সতর্ক এবং ৪ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, এত কম সময়ে এত বিপুলসংখ্যক নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা বিএনপিতে এই প্রথম।
তবে বিএনপি নেতাদের অনেকে বলছেন, এই ‘অবাধ্য’ নেতা-কর্মীদের গত দুই মাসের কর্মকাণ্ড ১৫ বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার দলকে সমালোচনার জায়গায় নিয়ে গেছে। বিশেষ করে, একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিএনপি আগামী দিনের রাজনীতিতে বা ক্ষমতায় গেলে নেতা-কর্মীরা কী ধরনের আচরণ করতে পারেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডগুলো সেসব প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
সিলেটের মত ঘটনা ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডেও দেখা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ করেই ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি বাতিল করে বিএনপি। অভিযোগ ছিল চাঁদাবাজি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাঁচাতে তদবির। এছাড়া বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের পক্ষ হয়ে বিএনপির এক নেতা ব্যাংক দখলে গিয়েছিলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘অভিযোগ এলেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা সবাইকে একটা বার্তা দিচ্ছি যে দুর্বৃত্তায়ন চলবে না, অপরাধ করলে মেনে নেব না।’