ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে পারবেন ড. ইউনূস: বিশেষজ্ঞদের অভিমত

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে ফেরতে পারবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া বিবাদ মিটিয়ে নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গেও কাজ শুরু করবে পারবেন তিনি। খবর সাউথ চায়না মনিং 

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে ইউনূসের টানপোড়নের সম্পর্কের বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে যেহেতু ভারত ও চীনের ‘কৌশলগত ভালো সম্পর্ক’ রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন রয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘আমি মনে করি ড. ইউনূস দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে প্রস্তুত থাকবেন।’ কারণ ট্রাম্প এমন সময় ক্ষমতায় এসেছেন যখন শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করছে ইউনূস। 

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

এদিকে গত ৫ নভেম্বর ট্রাম্পের জয়ের পরই তাকে শুভেচ্ছা জানান প্রফেসর ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে তিনি মুখিয়ে আছেন।

২০১৬ সাল থেকেই ট্রাম্প এবং ইউনূসের মধ্যে ‘দ্বন্দ্বের’ সূত্রপাত। ওই বছর ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর কঠোর সমালোচনা করেছিলেন ইউনূস। ট্রাম্পের জয়কে তিনি ‘একটি সূর্যগ্রহণ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন এবং তার জয় তাকে এতটাই আঘাত করেছে যে তিনি কথা বলতে পারছেন না।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেছেন, আগেরকার পরিস্থিতি এবং বর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। ড. ইউনূস এখন ১৭ কোটি মানুষের একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। যেই দেশের দক্ষিণ এশিয়া এবং এর বাইরেও ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূস খুবই বুদ্ধি খাটিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টি দেখভালো করছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি ট্রাম্পের নীতি পরিবর্তনের চেয়ে বেশি চলমান থাকবে। কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেন।’

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইপিএজি এশিয়া-প্যাসিফিক, অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনির খসরু বলেছেন, ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে ইউনূস যে ডোনেশন দিয়েছিলেন সেটি ট্রাম্প-ইউনূসের ‘সম্পর্ক জটিল করেছে’। তবে এ বিষয়টি বাংলাদেশের পুরো বৈদেশিক নীতির প্রতিনিধিত্ব করে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ পারস্পরিক লাভজনক ক্ষেত্র- যেমন ব্যবসা, উন্নয়ন ও প্রযুক্তিতে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

এই বিশ্লেষক বলেছেন, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করবে। বিশেষ করে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে। তার মতে নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বাংলাদেশকে নিয়ে যে পোস্ট দিয়েছিলেন সেটি তার নীতির প্রতিনিধিত্ব নয়, মূলত নির্বাচনী প্রচারণার অংশ ছিল।

এই বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের উচিত একজন লবিস্ট নিয়োগ করা। যিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নীতি ও মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশের আবেদন বৃদ্ধি করতে পারবেন।

গত ৩১ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়টিকে বর্বরোচিত বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি হিন্দু আমেরিকানদের রক্ষার কথা বলেন। 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলা লড়ব: জেড আই খান পান্না Nov 21, 2024
img
আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি Nov 21, 2024
img
মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া Nov 21, 2024
img
থানা হেফাজতে আলোচিত সাবেক এমপি শাহজাহান ওমর Nov 21, 2024
img
সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি মেহেদীর জামিন স্থগিত Nov 21, 2024
img
ড. ইউনূসের শ্রম আদালতে ৫ ও মানহানির ১ মামলা বাতিল Nov 21, 2024
img
রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের অবরোধ Nov 21, 2024
img
বিচারের শুদ্ধতার জন্য ট্রাইব্যুনালে আপিলের বিধান রাখা হয়েছে: আইন উপদেষ্টা Nov 21, 2024
img
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা Nov 21, 2024
img
ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা Nov 21, 2024