‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠান নিয়ে অপপ্রচার, জবাব দিলেন হানিফ সংকেত

কয়েকযুগ ধরে হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র শুটিং হয় দেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন স্থানে। সেই ধারাবাহিকতায় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ এবার শুটিংয়ের জন্য বেছে নেয় ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের টংকনাথ জমিদারবাড়ি। শুটিং শুরুর কিছু সময় পর চেয়ার ছোড়াছুড়ির একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে।শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। প্রকৃত ঘটনা নিয়ে এবার নিজের ভেরিফাইয়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পক, নির্মাতা ও উপস্থাপক হানিফ সংকেত। 

ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আসলে আমরা ভিউবাজদের ভিউ বিড়ম্বনার স্বীকার হয়েছি। কোনো অপপ্রচারই “ইত্যাদি”র সঙ্গে দর্শকদের এই ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। তার প্রমাণ ঠাকুরগাঁওয়ের ‘ইত্যাদি’ দেখার জন্য দর্শকদের এই বাঁধভাঙা স্রোত, যা আমাদের অভিভূত করেছে। আর দর্শকদের এই ভালোবাসায় ধন্য হয়েই ‘ইত্যাদি’ এ বছর পদার্পণ করেছে তার ৩৭তম বছরে।’ 

তিনি আরও লিখেন, ‘ইত্যাদি’র ঠাকুরগাঁওয়ের ধারণ অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু কিছু মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সংবাদ ও মন্তব্য পড়ে কিছুটা অবাকই হয়েছি। ভেবেছিলাম এসবের কোনো জবাব দেব না। কিন্তু তাদের মন্তব্য ও সংবাদ দেখে মনে হচ্ছে, অনুষ্ঠানস্থলে আমি নই, বোধ হয় তারাই উপস্থিত ছিলেন। তাদের মন্তব্য পড়ে মনে হয় অনুষ্ঠানস্থলে হামলা, মারামারি, ভাঙচুর হয়েছে, যে কারণে আমি অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হই। অথচ ঠাকুরগাঁওবাসী এবং উপস্থিত দর্শকেরাই জানেন, এ ধরনের কোনো ঘটনাই সেখানে ঘটেনি।’

হানিফ সংকেত জানান, আমরা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্ননিদর্শনসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে গিয়ে ‘ইত্যাদি’ ধারণ করছি প্রায় তিন দশক ধরেই। ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করার পর আমরা রাণীশংকৈল (রাজা টংকনাথের) রাজবাড়িতে ইত্যাদি ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেই এবং এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করি। আমরা ৬ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা করি এবং সন্ধ্যা সাতটার দিকে অনুষ্ঠান শুরু করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আমরা জানতে পারি অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অপেক্ষা করছেন অনুষ্ঠান দেখার জন্য। অনুষ্ঠানে দর্শক বাছাই, নৃত্য ও গান ধারণ করার পরই হঠাৎ করে বাঁশের ঘেরা সরিয়ে কয়েক হাজার লোক আমন্ত্রণপত্র না পেয়েও তাদের প্রিয় ইত্যাদি দেখার জন্য অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে। ফলে অনুষ্ঠানস্থলে সাময়িক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। আমরা পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান ধারণ স্থগিত করি এবং পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ধারণ শুরু করি। যদিও ইতোমধ্যে স্থগিতের কথা শুনে অনেক দর্শকই চলে যান। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান ধারণ করি। 

উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ হামলা, ভাংচুর বা মারামারি নয়, ইত্যাদির প্রতি দর্শকদের ভালোবাসা জানিয়ে তিনি লিখেন, ভালোবাসার কারণেই তারা ‘ইত্যাদি’র ধারণ দেখার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে ছিলেন। কিন্তু স্থানাভাবে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। তাই চেয়ার সরিয়ে দাঁড়াবার স্থান করছিলেন। আর সে কারণেই এই চেয়ার ছোড়াছুড়ি। এর ফলে কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঘটনাটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে কেউ কেউ মিথ্যে তথ্য দিয়ে এবং রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচারের চেষ্টা করছেন।

কিছু ‘মতলববাজ’ ব্যক্তি নিরাপদ দূরত্বে থেকে নানান পোস্ট দিয়ে নিজের মতলব হাসিলের চেষ্টাও করছে। যারা এই ঘটনাটির সঙ্গে রাজনীতিকে সংযুক্ত করতে চাইছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ‘আমি যেমন কখনই কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হইনি, ইত্যাদিও তেমনি সবসময়ই থেকেছে রাজনীতিমুক্ত’।

আর তাই দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও, গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রায় অর্ধলক্ষাধিক দর্শক নিয়ে ইত্যাদি শেরপুর পর্ব এবং ২৯ নভেম্বর কয়েক হাজার দর্শক নিয়ে ইত্যাদি বাগেরহাট পর্ব প্রচারিত হয় এবং প্রতিটি অনুষ্ঠান অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ধারণ করা হয়।

আসলে আমরা ভিউবাজদের ভিউ বিড়ম্বনার স্বীকার হয়েছি। কোন অপপ্রচারই ইত্যাদির সঙ্গে দর্শকদের এই ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। তার প্রমাণ ঠাকুরগাঁওয়ের ‘ইত্যাদি’ দেখার জন্য দর্শকদের এই বাঁধভাঙা স্রোত। যা আমাদের অভিভূত করেছে। আর দর্শকদের এই ভালোবাসায় ধন্য হয়েই ইত্যাদি এ বছর পদার্পণ করেছে তার ৩৭তম বছরে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৮ দফা ঘোষণায় জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশের সমাপ্তি Dec 14, 2025
img
দেশে থাকা ফ্যাসিবাদী শক্তির অবশিষ্টাংশ দমন করা হবে : আদিলুর Dec 14, 2025
img
অভিষেক ম্যাচেই ২ রানে আউট বাবর আজম Dec 14, 2025
img
ওসমান হাদিকে ব্যাংকক নিতে প্রস্তুত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স Dec 14, 2025
img
ঢাকার হত্যা চেষ্টায় বিএনপিকে জড়ানোর ষড়যন্ত্র চলছে : আলতাফ হোসেন চৌধুরী Dec 14, 2025
img
ভারত সন্ত্রাসীদের সেফ হাউজ: হাসনাত Dec 14, 2025
img
পরিবহন সেক্টরে জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যমভিত্তিক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন Dec 14, 2025
img
অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে : প্রধান বিচারপতি Dec 14, 2025
img
যুবভারতী কাণ্ডে স্ত্রীর জন্য প্রতিবাদী হলেন রাজ Dec 14, 2025
img
বোনদের অভিযোগকে মিথ্যা দাবি ডিপজলের Dec 14, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাই রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ, সরাসরি নৌপরিবহন চালুর পরিকল্পনা Dec 14, 2025
img
পরিবারের সিদ্ধান্তে হাদিকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি Dec 14, 2025
img
সব আনন্দ মিস করছি: মিমি চক্রবর্তী Dec 14, 2025
img
প্রতারণা মামলায় তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ Dec 14, 2025
img

জামায়াত নেতা মিলন

হাদিকে বারবার প্রাণনাশের হুমকি দিলেও পদক্ষেপ নেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় Dec 14, 2025
img
ঝিনাইদহ সীমান্তে বিজিবির সতর্কতা জোরদার Dec 14, 2025
img
৫৪ বছরেও বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্ত বা বিচার করা হয়নি : গোলাম পরওয়ার Dec 14, 2025
img
রাজশাহীতে শিশু সাজিদের ঘটনায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ Dec 14, 2025
img
১৭ দিনে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করল ডিজনি অ্যানিমেশন সিক্যুয়াল ‘জুটোপিয়া টু’ Dec 14, 2025
img
ক্রিকেটারদের গেটের বাইরে আটকে রাখা হয়েছিল, দাবি তামিমের Dec 14, 2025