চা বিক্রেতা থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী

শৈশবে তিনি রেল স্টেশনে চা বিক্রি করতেন। পরে রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (আরএসএস) এর মাধ্যমে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ২০১৪ সালে তিনি বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

এতোক্ষণে হয়তো ঠিকই ধরতে পেরেছেন, তিনি কে। বলছি ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদার দাস মোদীর কথা।

১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গুজরাটের মেহসানা জেলার উনঝা শহরে অবহেলিত গাঞ্চি সম্প্রদায়ে মোদীর জন্ম। তার বাবা ছিলেন চা বিক্রেতা। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মোদী ছিলেন তৃতীয়। বাবাকে সাহায্য করতে শৈশবে তিনি আহমেদাবাদের ভাদনগর রেলস্টেশনের ক্যান্টিনে চা বিক্রি করতেন। এক সময় গুজরাট রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির ক্যান্টিন বয় হিসেবেও কাজ করেছেন।

আট বছর বয়স থেকেই একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (আরএসএস) এর সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ভারতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বিচিত্র সংস্কৃতি উপভোগ করতে ১৯৬৭ সালে ১৭ বছর বয়সে একবার তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান।

অবশ্য দুই বছর পরেই ১৯৭১ সালে বাড়ি ফিরে আসেন এবং আরএসএস এর প্রচারক হিসেবে রাজনীতিতে পা রাখেন। ১৯৭৫-৭৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করলে মোদী আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান এবং সরকার বিরোধী প্রচারণায় ভূমিকা রাখেন। এসময়ই মোদীর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

১৯৮৫ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৭ সালে এর গুজরাট শাখার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে মোদী চমক দেখান যখন ১২১টি আসনে বিজয়ী হয়ে গুজরাটে সরকার গঠন করে বিজেপি। এ নির্বাচনে জয়ের পেছনে বড় অবদান রাখেন মোদী।

ফলস্বরূপ ১৯৯৮ সালে তিনি কেন্দ্রীয় বিজেপির জেনারেল সেক্রেটারী নিযুক্ত হন এবং দিল্লি চলে যান। ২০০১ সালে কাশুভাই প্যাটেল পদত্যাগ করলে মোদীর কপাল খুলে যায় এবং গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

২০০২ সালে গুজরাটে স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ১২শতাধিক লোক নিহত হয়। মোদির বিরুদ্ধে এ ঘটনায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগ উঠে এবং এ নিয়ে তিনি কঠোর সমালোচিত হন। অবশ্য পরে সুপ্রিম কোর্ট তাকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল।

পরবর্তীতে এ ঘটনাকেই পুঁজি করে মোদি নতুন চাল চালেন। গুজরাট দাঙ্গার পক্ষে সাফাই গেয়ে এবং হিন্দুত্ববাদের দোহাই দিয়ে পরবর্তী তিন দফা তিনি গুজরাট নির্বাচনে জয় পান।

২০০৭ সালের পর তিনি নিজেকে একজন সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে তুলে ধরতে মাঠে নামেন। তার সময়ে গুজরাটে ব্যাপক উন্নয়ন এবং অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

যদিও বিভিন্ন গবেষণা ও পরিসংখ্যান বলছে ওই সময় গুজরাটের মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

মোদি সবচেয়ে বড় চমক দেখান ২০১৪ সালে। জাতীয় নির্বাচনে বিজেপি থেকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হন। এ নির্বাচনে বিজেপি লোকসভার ৫৩৪ আসনের ২৮২ তে জয় পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং সরকার গঠন করে। আর মোদি হয়ে যান ভারতের ১৫তম এবং স্বাধীন ভারতে জন্ম নেয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী।

২০০৭ সালে তিনি ইন্ডিয়া টুডে ম্যাগাজিনের জরিপে ভারতের শ্রেষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় ১৫তম স্থানে জায়গা পান তিনি।

Share this news on: