জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, জাতিসংঘ বর্তমানে একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং এখনও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার আওতাধীন। তিনি বলেন, এই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার পতন না ঘটলে সারা বিশ্বে কোনো মানুষ বা অঞ্চল নিরাপদ থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, "অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, যদি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটাতে হয়, তাহলে ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই একসঙ্গে, যুগপৎভাবে এগিয়ে নিতে হবে।"
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি বাংলাদেশ কর্তৃক গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, গাজায় কয়েকদিন আগে একটা যুদ্ধবিরতির নাটক হয়েছিল। অনেকেই বলছিলেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বাইডেনের সমালোচনা করেছেন এবং বাইডেন যেহেতু সরাসরি এই যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন করেছেন ট্রাম্প, এসে এই যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন এবং যুদ্ধ থামবে। ট্রাম্প যেহেতু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কথা বলছেন সেহেতু ফিলিস্তিনের পক্ষে ও তার একই রকম ভূমিকা থাকবে। কিন্তু কাগজে কলমে যুদ্ধ বিরতি আছে। সেটার ওপর ভরসা করে গাজার অনেক নারী শিশু গাজায় ফিরে এসেছিলেন এবং নতুন করে এই ধ্বংসস্তূপে জীবন খোঁজার চেষ্টা করছে। তখনই ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহু পরিষ্কার আলাপ আলোচনা করে সম্মতি নিয়ে একটা বড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইসরায়েল আবার বর্বর হামলা শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ট্রাম্প মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আত্মস্বীকৃত সর্বশেষ দুর্বৃত্ত হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। সারা পৃথিবীর সব আইন ভঙ্গ করে, সব সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমনকি নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইসরায়েলের ক্ষমতা ছিল না একের পর এক এমন বর্বরতা চালানো। তার পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনের কারণে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কৌশলগত স্বার্থের কারণে। গাজা অঞ্চলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যুদ্ধ চালাচ্ছে নিজের বসতি তৈরি করা ও তার মুনাফার সন্ধানে এবং আধিপত্য নিশ্চিত করার জন্য।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আজকে এই বাংলাদেশে পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, জায়নবাদের বিরুদ্ধে আমাদের এ লড়াই তীব্র এবং শক্তিশালী করতে হবে। তাই বলতে চাই, ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি বাংলাদেশের ব্যানারে কালকে হোক বা পরশু হোক গোটা বাংলাদেশে যেন প্রতিবাদ মিটিং মিছিল ঘোষণা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আগের সরকারও গাজায় যে হত্যাকাণ্ড চলছিল তার তীব্র প্রতিবাদ তারা করে নাই। বর্তমান সরকারও আমাদের গণতন্ত্রের ছবক, সংস্কারের ছবক শোনাচ্ছে। তাদের ভূমিকা কী?
ফিলিস্তিন সংহতি কমিটির পক্ষে ডা. হারুন উর রশীদ সমাবেশ থেকে আগামী রোববার সারাদেশে ফিলিস্তিনে সাম্রাজ্যবাদী ও জায়নবাদী হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভের আহ্বান জানান। এসময় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সভাপতি মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্ক্সবাদী) আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রমুখ। সমাবেশ শেষে তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে পল্টনের দিকে অগ্রসর হয়।
এসএস/এসএন