সম্প্রতি ভারাক্রান্ত মন নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। তাসনিম জারা তাঁর আবেগময় পোস্টে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং শহীদ পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে তাসনিম জারা তার আবেগময় পোস্টে এই আহ্বান জানান।
পোস্টে ডা. তাসনিম জারা বলেন, ‘বরিশাল থেকে ফিরছি। মন ভার হয়ে আছে।
মনে হলো লিখে একটু হালকা হই। আজ ভোর ৬টায় রওনা হয়েছিলাম বরিশালের উদ্দেশে। উদ্দেশ্য ছিল জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া এক ভাইয়ের মেয়ের সাথে দেখা করা, যে কিছুদিন আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ছোট একটা মেয়ে।
শহীদ বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানুবাড়ি থেকে ফিরছিল। পথেই ওর জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মেয়েটা নিজেই একা থানায় গেছে বিচার চাইতে। পাশে কেউ ছিল না।
মা তখন ঢাকায়, শহীদ বাবার মামলা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছে। ও ঘটনাটা বলছিল আর আমি মুখোমুখি বসে শুনছিলাম। প্রতিটা শব্দ বুকের মধ্যে এসে আঘাত করছিল। মনে হচ্ছিল, আমরা কতটা ভঙ্গুর একটা সমাজ তৈরি করেছি, যেখানে এমন ঘটনা ঘটে। আর এতটুকু একটা মেয়েকে একা থানায় এসে দাঁড়াতে হয়।’
ডা. তাসনিম জারা তার পোস্টে আরো উল্লেখ করেন, “ঘটনাটা বলতে বলতে সে এমন একটা কথা বলল, যা হয়তো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভুলতে পারব না। ‘আমি বিচার চাই, কারণ আমি এই দেশের নাগরিক। শহীদের মেয়ে বলে আলাদা করে বিচার চাই না। আমি চাই, এই দেশটা এমন হোক যেখানে সব মেয়েরা নিরাপদ থাকবে।’”
তিনি বলেন, ‘কী স্পষ্ট চিন্তা! কী দুর্দান্ত সাহস এই ছোট্ট মেয়েটার! এতটুকু বয়সে, এত বড় সহিংসতার শিকার হয়েও এ রকমভাবে সবাইকে নিয়ে ভাবছে। মনে হচ্ছিল ও শুধু নিজের নয়, দেশের প্রতিটা মেয়ে, প্রতিটা নারীর হয়ে কথা বলছে। ওর কথাগুলো এখনো বুকের ভেতর পাথরের মতো জমে আছে।’
এদিকে ডা. তাসনিম জারা ভাবছিলেন, ‘এমন দেশ আমরা কিভাবে গড়তে পারব, যেখানে কোনো মেয়েকে আর এভাবে একা থানায় এসে দাঁড়াতে হবে না। যেখানে বিচার ভিক্ষা করতে হবে না, হবে জন্মসূত্রে পাওয়া অধিকার।’
তিনি শেষে বলেন, ‘আর আমরা যখন এই মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার চাইছি, তখন আমাদের চোখ রাখতে হবে শহীদ পরিবারগুলোর দিকেও। এদের অনেকেই বাবা-ভাই-স্বামী হারিয়েছে। আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির বাস্তবতায় এই পরিবারগুলোর মেয়েরা আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি। করুণা থেকে নয়, বরং দায়িত্ব থেকে, শহীদ পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’
এসএম