বোয়াও সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

চীনের বোআও ফোরামে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে এশিয়া এবং পৃথিবী গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হচ্ছে এবং ঋণের বোঝা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। পাশাপাশি গাজায় হামলা ও রোহিঙ্গাদের উপর অমানবিকতা নিয়েও কথা বলেন ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। 

তিনি বলেন, এশিয়া, যা বিশ্বের ৬০% জনসংখ্যা এবং ৫৫% জিডিপির প্রতিনিধিত্ব করে। এসব পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আজকের যুগে এক দশক আগের নীতিগুলো আর কার্যকর নয়, এবং তাই এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের গত এক বছরের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ দুর্নীতি এবং দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে। জনগণের শক্তিশালী অঙ্গীকারে বেশ কয়েকটি সংস্কার শুরু হয়েছে, যেমন নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা এবং প্রশাসন।

তিনি জানান, এশিয়ার দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও বৈশ্বিক আর্থিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ঋণের ভার মোকাবেলা করছে। তিনি বলেন, এসডিজি লক্ষ্যগুলোর জন্য তহবিলের ঘাটতি রয়েছে এবং এশিয়ার দেশগুলোকে অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের জন্য বড় আকারে বিনিয়োগ প্রয়োজন।

তিনি দুর্নীতি এবং অবৈধ আর্থিক প্রবাহের সমস্যাও তুলে ধরেন। যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বছরে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি করছে। এশিয়াকে একত্রিত হয়ে সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য একটি বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।

খাদ্য নিরাপত্তা, শক্তি নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ইউনুস বলেন, টেকসই শক্তির সমাধান ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। তিনি আরও বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক মডেল পরিবেশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এশিয়াকে টেকসই অর্থনৈতিক মডেল গ্রহণ করতে হবে।

জলবায়ু সংকটের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এটি মানবতার জন্য অস্তিত্বের হুমকি। এশিয়ার জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অতিরিক্ত অনুদান ভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়নের প্রয়োজন।

প্রযুক্তির অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কুয়ান্টাম কম্পিউটিং দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এশিয়া উন্নত দেশগুলির তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে। তাই প্রযুক্তি, ডেটা নিরাপত্তা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।

প্রফেসর ইউনুস তাঁর ভাষণে এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং যুবশক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, "প্রত্যেক যুবককে শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য ধনসম্পদের ঘনত্ব, এবং শূন্য বেকারত্ব ধারণায় বড় হতে হবে।" শেষে, তিনি এশিয়ার দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে ভবিষ্যত গড়ার আহ্বান জানান।

টিএ/

Share this news on: