প্লাস্টিক বর্জ্য যে স্কুলের মাসিক বেতন

টাকা নয় প্লাস্টিকের বর্জ্য দিলেই পড়াশুনা করা যায় স্কুলটিতে। বাসা-বাড়ি কিংবা পথে-ঘাটে যে কোনো জায়গা থেকে কুড়িয়ে আনা পুরনো প্লাস্টিক পণ্য কিংবা পলিথিন বা এ ধরণের সামগ্রী হোক তাতেই চলবে। স্কুলের মাসিক বেতন কিংবা পরীক্ষার ফি সবই পরিশোধিত বলে গণ্য হবে। এমন ব্যতিক্রমী স্কুলটি পাশের দেশ ভারতে। স্কুলটির নাম ‘অক্ষর’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত পরিবেশের ক্ষতি মোকাবিলায় এমন উদ্যোগ। এতে করে অর্থাভাবে যেমন কারো লেখাপড়া ঠেকে থাকবে না তেমনি পরিবেশও থাকবে পরিচ্ছন্ন।

আসামের গুয়াহাটির পামোহিতে গাছপালা ঘেরা ‘অক্ষর’ স্কুলটি ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে। তবে গত ছয় মাস ধরে সেখানে টাকার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বর্জ্য নেওয়া হচ্ছে বেতন হিসেবে। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা পারমিতা শর্মা এবং মজিন মুখতার বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ছিল এমন একটা স্কুল তৈরি করা যেখানে গড়পড়তা শিক্ষা নয়, পড়ুয়াদের নানা বিষয়ে উৎসাহী করে তোলা যাবে। তার প্রথম পদক্ষেপটাই হলো প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা’। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ২০ ব্যাগ করে প্লাস্টিক জমা করে। শুধু তাই নয়। মানুষ যাতে প্লাস্টিক বর্জ্য না পোড়ায় সে জন্যও সবাইকে অনুরোধ জানানো হয় এই স্কুল পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে।  

মজিন ও পারমিতা জানান, পামোহি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে। তাদের কেউ পাথর কাটে। কেউ নির্মাণ শ্রমিক কিংবা কেউ চা শ্রমিক। অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোটা তাদের কাছে বিলাসিতা। ফলে গ্রামে অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুলের পরিবর্তে পাথর খাদে পাঠাতে পছন্দ করে। যাতে তারা প্রতিদিন কয়েক রুপি আয় করতে পারে।

‘অক্ষর ফোরাম’ এ অবস্থার পরিবর্তন চায়। পরিবারগুলিকে কেবলমাত্র প্লাস্টিকের অপচয় হিসাবে ফি দিতে উৎসাহিত করে, অক্ষর তাদের পরিবারের উপর আর্থিক বোঝা ছাড়াই স্কুলে যোগ দিতে উৎসাহ দেয়। সেই সঙ্গে, এটি ক্ষুদ্র গ্রামের পরিবেশগত সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে প্লাস্টিকের যে পুনর্ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে তারা সচেতনতা সৃষ্টি করে।

ছয় মাস আগে, স্কুলটি আশেপাশের পরিবারের কাছ থেকে শুষ্ক প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ শুরু করে। এই প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও বিচ্ছিন্ন করার জন্য শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো হয়।

শিক্ষার্থীদের জীবন যাপনে অভিজ্ঞতা এবং তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ড. বর্থাকুর বলেন, ‘সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের দ্বারা শুরু করা থেকে সম্পন্ন করা হয়। তাদের বিভিন্ন ধাপে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, স্কুলে এটিকে পৃথকীকরণ এবং সেটিকে পুনরায় ব্যবহারের জন্য প্রাথমিকভাবে উপযোগী করে রাখা তাদের শেখানো হয়। এখন স্কুলটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতনের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক ছাড়া আর কিছুই নেওয়া হয় না।’

স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পারমিতার ভাষায়, এই রাজ্যের মানুষ বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিক ব্যবহার করে। আর এই অতিরিক্ত পরিমাণে প্লাস্টিকের ব্যবহার যে শুধু পরিবেশের ক্ষতি করছে তাই নয়! সঙ্গে বাস্তুসংস্থানটাও শেষ করে দিচ্ছে। শীতকালে মানুষ তো আবার নিজেদের একটু গরম রাখতে এই প্লাস্টিকও পুড়িয়ে থাকে। আর তারপরেই আমাদের মাথায় প্ল্যান আসে, ব্যবহৃত বর্জ্য প্লাস্টিক রিসাইকেল করে যদি একটু হলেও পরিবেশটা বাঁচিয়ে রাখা যায়।’

শুরু থেকেই ‘অক্ষর ফোরাম’ অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম ছিল। অন্যান্য স্কুলের মতো তারা শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না। তারা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সক্ষমতার উপর ফোকাস করতে চায়। এখানে শিক্ষার্থীরা একে অপরকে শিক্ষা দেয়। তাদের কাছে শিক্ষা একটি মজার উপলক্ষ ছাড়া কিছুই না।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি হিসাবে প্লাস্টিকের বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ‘অক্ষর ফোরাম’ শিক্ষাকে সাশ্রয়ী করছে তাই নয় তারা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে নাড়া দিয়েছে। এর হাত ধরে আসামের ছোট্ট গ্রামটিতে পরিবর্তন আসছে। ধীরে ধীরে সে পরিবর্তন হয়তো আরো বেগবান হবে।

 

টাইমস/এমএস/এইচকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ম্যাচসেরা হওয়ার পর মুখ খুললেন সাইফ হাসান Sep 21, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Sep 21, 2025
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর চেতনার ব্যবসা আর চলবে না : সালাহউদ্দিন আহমেদ Sep 21, 2025
হবু স্ত্রীকে নিয়ে হান্নানকে লক্ষ্য করে ফেসবুকে অপপ্রচার! Sep 21, 2025
৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনকে ৭১ সালের দায় দেয়া হয়;আকাশ দাস Sep 21, 2025
শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মবিরতি নিয়ে যা বললেন ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী এষা Sep 21, 2025
img
কেইনের হ্যাটট্রিকে হফেনহাইমকে উড়িয়ে বায়ার্নের চারে চার Sep 21, 2025
কেউ যেন বিএনপির নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে না পারে- তারেক রহমান Sep 21, 2025
img
দুর্গাপূজার আগেই সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি Sep 21, 2025
img
গভীর রাতে ভিসির বাসভবনের সামনে থেকে সরলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা Sep 21, 2025
img
আলোচনা চলাকালে রাজপথে নামা দ্বিচারিতা: সালাহউদ্দিন আহমদ Sep 21, 2025
img
সরকারের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে ঢালাও মামলা ও মব: সালাহউদ্দিন Sep 21, 2025
img
দেশের স্বার্থে সবাইকে সংকীর্ণ ও হিংস্র দলীয়পনার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে : ঢাবি উপাচার্য Sep 21, 2025
img
কুষ্টিয়ায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল দুইজনের Sep 21, 2025
img
রোববার থেকে রাজপথে নামছেন ফিলিপাইনের মানুষ Sep 21, 2025
img
তাসকিন-মুস্তাফিজের কারণে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়নি: শানাকা Sep 21, 2025
img
দুর্গাপূজায় সর্বত্র নিরাপত্তায় পাশে থাকবে বিএনপি : আব্দুস সালাম আজাদ Sep 21, 2025
img
১২ ম্যাচ কম খেলেই সাকিবের রেকর্ডে ভাগ বসালেন ‘ফিজ’ Sep 21, 2025
img
আন্দোলনের চাপে স্থগিত পোষ্য কোটা, তবে বাতিলের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা Sep 21, 2025
img
সাকিবকে পেছনে ফেলে লিটনের নতুন রেকর্ড Sep 21, 2025