আমার স্বামী কী কোরবানির গরু, প্রশ্ন ছোট সাজ্জাদের স্ত্রীর

চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে হাতকড়া পরিয়ে এলাকায় ঘুরিয়েছে পুলিশ। এ সময় সকল সন্ত্রাসীদের প্রতি সতর্কতা জানিয়ে পুলিশ বলে, তাদের পরিণতিও এই সাজ্জাদের মতো হবে। তাকে পুলিশের ঘোরানো ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপর সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় দেওয়া ১ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওতে তামান্না বলেন, “কোনো জায়গায় কী নজির আছে একজন রিমান্ডের আসামিকে গরুর মতো রশি বেঁধে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করার? জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতেছে ওসি আরিফ। আমার হাজব্যান্ড কি কোরবানের গরু? আমার স্বামীকে এভাবে নিয়ে মাইকিং করতেছে!”

মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “আসলে সাজ্জাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নাই, ওর জন্য কথা বলার কেউ নাইতো; আমিও মেয়ে মানুষ—দুই তিনটা মামলা দিয়ে বসে আছে। এখন আমি আপনাদের ওপর ছেড়ে দিছি। আপনাদের কি মনে হয়, এটা কী মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না? আমার স্বামীকে এভাবে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে এলাকায় এলাকায় নিয়ে গিয়ে অপমানি করা হচ্ছে, কেন? আমি আপনাদের কাছে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম।”

ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, “আমার স্বামী যদি অপরাধী হয় তার বিচার আদালত করবে। ওসি আরিফ আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে নাই। আমার স্বামীকে সূচি গ্রেপ্তার করিয়েছে—এটা আমি বারবার বলেছি। বসুন্ধরা সিটিতে আমরা ঘুরতে গেছি, ওই অবস্থায় সূচি আমার স্বামীকে দেখে সিকিউরিটি রুমে নেওয়ার তিন ঘণ্টা পর পুলিশ আমাকে ও আমার স্বামীকে গ্রেফতার করে। আমি পরে ছুটে আসি।”

“আমার স্বামী যখন তামান্না তামান্না বলে চিৎকার করছিলো, তখন আমার মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় পাঁচ মিনিটের জন্য নিচে নামছিলাম। একসাথেই গ্রেফতার হয়েছি। ওসি আরিফ বা সিএমপির কমিশনার আমার স্বামীকে গ্রেফতার করে নাই। কিন্তু ওরা সিম্পেথি নেওয়ার জন্য আমার স্বামীকে রাস্তায় নামিয়ে… আমার স্বামীকে গুলি করে মারতে পারতেছে না?”

গত ১৫ মার্চ দিবাগত রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থেকে সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ২৯ মার্চ দিবাগত রাত সোয়া দুইটার দিকে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড এলাকায় প্রাইভেট কারে দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. আব্দুল্লাহ ও মো. মানিক নামে দুজন নিহত হয়। এই জোড়া হত্যাকাণ্ডেও পরিকল্পনাকারী হিসেবে কারাগারে থাকা সাজ্জাদের নাম ওঠে আসে।

'বুড়ির নাতি' নামে পরিচিত সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ। গত ২৮ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দিয়েছিল এ সন্ত্রাসী। পরবর্তী গত ৩০ জানুয়ারি সাজ্জাদকে ধরতে তথ্যদানকারী কিংবা সহায়তাকারীকে নগদ অর্থ পুরষ্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড়ে তাকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তিনি। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়।

অপরাধজগতে পা রেখে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপি চট্টগ্রাম বিভাগের এক তরুণ নেতার আশ্রয়ে চলে যান তিনি। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা তার আতঙ্কে দিনাতিপাত করেন। তার চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলত। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তুলতেন এই সন্ত্রাসী।

সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে তিনি।

গত বছর ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।

গত বছরের ২১ অক্টোবর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়ায় একদল যুবক প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে তাহসিনকে। এলাকার আধিপত্য নিয়ে দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী-সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা ও ছোট সাজ্জাদের বিরোধে খুন হন তাহসিন। তিনি বাবলার অনুসারী ছিলেন।

এসএম

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতমুখী নয়, দেশমুখী রাজনীতি প্রয়োজন : ডাকসু ভিপি Dec 05, 2025
img
বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বিরোধীদের সাক্ষাৎ করতে দিচ্ছে না সরকার, অভিযোগ রাহুল গান্ধীর Dec 05, 2025
img
জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন Dec 05, 2025
img
এনসিপির ৫ নেতার বিরুদ্ধে নেত্রীর মামলা দায়ের Dec 05, 2025
img
দেশজুড়ে মুক্তি পাচ্ছে আলোচিত সিনেমা ‘খিলাড়ি’ Dec 05, 2025
img
বেগম জিয়ার অসুস্থতার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই: খসরু Dec 05, 2025
img
ঐতিহাসিক বৈশ্বিক ভূমিকা থেকে সরে আসবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র Dec 05, 2025
img
মিরপুর চিড়িয়াখানার খাঁচা থেকে বেরিয়ে গেল সিংহ Dec 05, 2025
img
শ্রমিকরা এলাকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি : প্রিন্স Dec 05, 2025
img
পে-স্কেল নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের নতুন ঘোষণা Dec 05, 2025
img
গাজা পুনর্গঠনে ১০ কোটি ডলারের মানবিক সহায়তা দেবে চীন Dec 05, 2025
img
কিসের টানে ঢাকা ছাড়লেন অভিনেত্রী পরীমণি? Dec 05, 2025
img
বিশ্বকাপে ফেভারিটদের তালিকায় মেসির চোখে নেই পর্তুগাল Dec 05, 2025
img
ইংল্যান্ডের ক্যাচ ছাড়ার মহড়ায় রেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়ার লিড Dec 05, 2025
img
সৌদিতে তারকাদের মেলা, নজর কাড়লেন ঐশ্বরিয়া Dec 05, 2025
img
এভারকেয়ার থেকে বাসায় ফিরলেন জুবাইদা রহমান Dec 05, 2025
img
৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে যাচ্ছে পাকিস্তান Dec 05, 2025
img
ব্রাদার্সকে ৫-১ গোলে হারিয়ে শীর্ষে বসুন্ধরা কিংস Dec 05, 2025
img
গারো জনগোষ্ঠীর প্রতি বিএনপি সব সময়ই আন্তরিক : প্রিন্স Dec 05, 2025
img
অন্তর্জালের অস্বস্তিকর বাস্তবতা নিয়ে মুখ খুললেন মনিরা মিঠু Dec 05, 2025