চীনের দিকে তাকিয়ে ট্রাম্প, বললেন ‘শি বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমানদের একজন’

মার্কিন প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প সকল দেশের ওপর আরোপিত বর্ধিত পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা থেকে তিন মাসের জন্য সরে এলেও চীনের পণ্যে ছাড় দিতে রাজি নন তিনি।

বুধবার (৯ এপ্রিল) ওভাল অফিসে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, চীনের পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক ‘অবিলম্বে কার্যকর’ হবে।

এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতেই জানা যায়, চীনের পাল্টা শুল্কে চটেছেন ট্রাম্প। ফলে দেশটির পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশে উন্নীত করেছিলেন। বুধবার তা আরও একধাপ বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দেন তিনি।

শুল্ক আরোপের জবাবে চীনও অবশ্য মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা আগে ছিল ৩৪ শতাংশ। বৃহস্পতিবার থেকে চীনের ধার্য করা এ শুল্ক কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ট্রাম্প চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছেন। কারণ, আপনি যখন যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করবেন, তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাল্টা আরও কঠিন আঘাত করতে যাবেন।”

ওভাল অফিসে এনিয়ে নানামুখী প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।

একজন সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান, হোয়াইট হাউজের এই কৌশল যদি দেশগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনার জন্যই হয়ে থাকে, তাহলে কেন আপনি শীর্ষ সহকারীদের বললেন যে তারা হোয়াইট হাউজে লাইন ধরে থাকবে?

জবাবে ট্রাম্প বলেন, “এটি একটি আলোচনা।”

অবশ্য ট্রাম্প এ-ও বলেছেন যে তিনি চীনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলার কথা বিবেচনা করবেন। পাশাপাশি তিনি মনে করিয়ে দেন, চীনারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সুবিধা নিচ্ছে না!

“আমি মনে করি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করাই হবে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ,” যোগ করেন ট্রাম্প।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্পর্কে বলতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ”শি বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের একজন এবং আমরা শেষ পর্যন্ত একটি খুব ভালো চুক্তি করব।”

ট্রাম্প সংক্ষেপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “আমাদের কাছে এমন অস্ত্র আছে যা কেউ জানে না।”

এর পর পরই শি’য়ের প্রসঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। তিনি বলেন, “শি এমন একজন মানুষ যিনি ঠিক জানেন কী করতে হবে, তিনি তার দেশকে ভালোবাসেন”।

গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। সেই শুল্কের একাংশ সেদিন থেকেই কার্যকর হয়ে গেছে। বাকি অংশ বুধবার কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। মূলত এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধ পুরোদমে শুরু হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল।

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের পক্ষে ভোট দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নও। অবশ্য ট্রাম্পের নতুন ঘোষণার ফলে এ সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আসে কি না, তা এখনও অজানা রয়ে গেছে।

এদিকে, চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতে হতেই বড় ধরনের পতন হয়েছে। এরপর ইউরোপের শেয়ারবাজারেও সূচকের পতন হয়।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক আঞ্চলিক সূচক প্যান-ইউরোপীয় স্টকস ৬০০ কমেছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আঞ্চলিক এই সূচকের অন্তর্ভুক্ত সব খাতের শেয়ারের দামেই নেতিবাচক প্রবণতা চলছে।

অবশ্য বর্ধিত শুল্কে তিন মাসের স্থগিতাদেশের ঘোষণার পর হু হু করে বাড়তে থাকে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সূচক। নাসডাক সূচক বেড়েছে ৯%, এসঅ্যান্ডপি ৮%।

ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পুঁজিবাজারও। এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৭%, টেসলার ২২%, মেটা ১৪.৯০%, গুগল ১০.২২%, মাইক্রোসফট ১০.৩১%, কিউকিউকিউ ১২.০৩%। শক্তি ফিরে পেতে শুরু করেছে ডলার।

এসএম/টিএ

Share this news on: