নেলসন মেন্ডেলা: কালো নেতার রঙ্গিন গল্প

সারাবিশ্বের নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী অবিসংবাদিত নেতা এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সেই দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট নেলসন মেন্ডেলা।

১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার মভেজু শহরে থম্বু রাজ পরিবারে এই মহান নেতার জন্ম। তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে পিতাকে হারান। পরবর্তীতে স্থানীয় এক গভর্নরের কাছে মেন্ডেলার থাকার সুযোগ হয়। যিনি তাকে স্কুলে পড়ার সুযোগ করে দেন। ১৩ ভাই-বোনের মধ্যে মেন্ডেলাই প্রথম স্কুলে পড়ার সুযোগ পান।

১৯৪০ সালে ফোর্ট হারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র প্রতিনিধি পরিষদ (এসআরসি) এর সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় বোর্ডিং হাউসে খাবার ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ বিরাজ করছিল। এছাড়া ছাত্র প্রতিনিধি পরিষদে ছাত্রদের পর্যাপ্ত ভোট না থাকার প্রতিবাদে তিনি পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর একজন ‘নাইট ওয়াচম্যান’ হিসেবে কাজ শুরু করেন।

১৯৪৪ সালে তিনি ‘‘আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস যুবলীগ’’ গঠন করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি এ সংগঠনের উচ্চ-পদস্থ নেতা হয়ে যান। এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় শত শত বছর ধরে চলা বর্ণবাদ, দরিদ্র্যতা এবং জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধীর মত বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিবর্গ সমর্থন ও সহযোগিতা করেছিলেন।

১৯৬২ সালে ‘রিভোনিয়া ট্রায়াল’ গঠন করে তার বিরুদ্ধে নাশকতা ও সহিংসতার অভিযোগ আনে তৎকালিন সরকার। বিচারে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় এবং ‘রোবেন দ্বীপে’ একটি কারাগারে রাখা হয়। শত নির্যাতনের পরও তিনি অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। দীর্ঘ সাড়ে ২৬ বছর কারাবাসের পর ১৯৯০ সালে মুক্তি পান এই মহান নেতা।

নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৯৩ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা এবং লিঙ্গভিত্তিক সকল প্রকার বৈষম্য নিষিদ্ধ করে দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়।

তিনি ১৯৯৭ সালে অবসর গ্রহণের করেন। পরে ১৯৯৮-৯৯ মেয়াদে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) এর মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

নোবেল পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ এবং রাশিয়া থেকে ‘লেনিন শান্তি পুরস্কার’ (১৯৯০), ভারত থেকে ‘ভারত রত্ন’ (১৯৯০), শাখারভ পুরস্কারসহ (১৯৮৮) ২৫০টিরও বেশি সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। স্থানীয়রা তাকে ভালোবেসে ‘মাদিবা’ বা ‘টাটা’ (পিতা) নামে ডাকতো।

বর্ণবাদবিরোধী এই নেতা ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর জোহান্সবার্গে ৯৫ বছর বয়সে শ্বাসযন্ত্রে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ফজলুর রহমানকে গালি দিয়ে স্লোগান দেওয়া ফারজানা চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার Sep 13, 2025
img
জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই Sep 13, 2025
হাইকমিশনের খালি গাড়িতে ডিম নিক্ষেপ, নিরাপদেই ছিলেন মাহফুজ আলম Sep 13, 2025
‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে’ Sep 13, 2025
img
লিটমাস টেস্টের ফল কী বার্তা দিচ্ছে? Sep 13, 2025
img
চীনা বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিল বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল Sep 13, 2025
img
পিআর পদ্ধতি সাধারণ মানুষ বোঝে না: মাহমুদুর রহমান মান্না Sep 13, 2025
img
পাকিস্তানে সংঘর্ষে প্রাণ গেল অন্তত ১৯ সৈন্যের Sep 13, 2025
img
দেড় কোটি টাকা কানাডায় মেয়ের কাছে পাচার, অভিযোগে ও আলোচনায় সাবেক প্রধান শাহীনুল Sep 13, 2025
img
ফের শক্তিশালী বৃষ্টিবলয়ে প্রবেশ করছে দেশ Sep 13, 2025
img
জাকসুর ফলাফল ঘোষণায় এত সময় লাগার কারণ Sep 13, 2025
img
জাকের ও শামিমের ব্যাটে লড়াইয়ের পুঁজি পেল বাংলাদেশ Sep 13, 2025
‘আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে আমরা জানি, গোপালগঞ্জে দেখে এসেছি’ Sep 13, 2025
img
ছেলে ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় গর্বিত সাদিক কায়েমের বাবা Sep 13, 2025
img
জুবিমেন্দির জোড়াগোলে আর্সেনালের দাপুটে জয় Sep 13, 2025
img
বিসিবির দায়িত্ব নিয়ে আবেগ প্রকাশ করলেন সাইমন টাফেল Sep 13, 2025
img
গতানুগতিক ধারার ভোটে ফের ফ্যাসিস্ট তৈরি হবে, টাকা পাচার হবে : রেজাউল করীম Sep 13, 2025
img
জামায়াত আল্লাহ ছাড়া কাউকে পরোয়া করে না: মাসুদ সাঈদী Sep 13, 2025
img
অপরাধ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় নাগরিকদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ : ডিএমপি কমিশনার Sep 13, 2025
img
রাশমিকাকে জাতীয় ক্রাশ বলা প্রচারের একটি কৌশল : মনোজ বাজপেয়ী Sep 13, 2025