তিন দিনের সফরে আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকায় আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল এন চুলিক এবং পূর্ব ও প্যাসিফিক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এন্ড্রু হেরাপ। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের প্রথম প্রতিনিধিদলের সফর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির মধ্যে নিকোল এন চুলিক বুধবার ভোরে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এরপর আলাদা ফ্লাইটে ঢাকায় আসবেন এন্ড্রু হেরাপ ও মিয়ানমারে নিযুক্ত মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসন।
মার্কিন প্রতিনিধিদলটি সফরের প্রথম দিনের শুরুতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবে। এরপর তাদের পর্যায়ক্রমে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা রয়েছে।
সফরের দ্বিতীয় দিন মার্কিন প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকার বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ চাওয়া হলেও সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে শেষ অবধি মার্কিন প্রতিনিধিদলটি সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ পেতেও পারেন।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরের অ্যাজেন্ডা নিয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বৈঠকগুলোতে ঢাকার পক্ষে বাংলাদেশি পণ্যে মার্কিন শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গ, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার অগ্রগতি, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক উত্তরণে মার্কিন সহায়তা চাওয়া হতে পারে।
অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের অ্যাজেন্ডায় থাকছে মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতিসহ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ, এক্ষেত্রে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিবেচনায় উভয় পক্ষ দেশটি নিয়ে যার যার অবস্থান জানতে চাইতে পারে। এ ছাড়া অবৈধ অভিবাসী ফেরতসহ ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্কের ধরন এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে রাখতে পারেন ট্রাম্পের কর্মকর্তারা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দৃশ্যমান। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফর করেছেন। ইতোমধ্যে ওয়াশিংটন এ সফর সম্পর্কে ঢাকার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছে। ঢাকার পক্ষ থেকে তার জবাবও দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
দায়িত্বশীল এক কূটনীতিক বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের মূল ইস্যু রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন কমাবে। আমরা শুনতে পাচ্ছি, মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে এসে এই বার্তা দেবে। কিন্তু অর্থায়ন কতটা কমবে বা ট্রাম্প প্রশাসনের রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, সেই সম্পর্কে হয়ত এই সফরে ধারণা পাওয়া যাবে। এ বছর না হলেও আগামী বছরের শুরুতে মিয়ানমারে নির্বাচন হওয়ার কথা। মিয়ানমারের নির্বাচন নিয়েও তারা কথা বলবেন। মিয়ানমারের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া-পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পাশে চাইবে।
এমআর/টিএ